পাহাড়ের পর পাহাড়। নীল নীল স্বপ্নময় পাহাড়! সারিসারি পাহাড়। উঁচু পাহাড়, নিচু পাহাড়। গহীন জঙ্গলময় পাহাড়। দৃষ্টির সীমানাজুড়ে পাহাড় আর পাহাড়। ধুসর দিগন্তেও উদ্ভাসিত পাহাড়! পাহাড়ের তলদেশে একটি দুটি ঘর। একটি দুটি পরিবার। মাত্র কয়েকটি মনুষ্যপ্রাণের বাস। এই পাহাড়ে কিছু প্রাণ। ঐ পাহাড়ে আরও কিছু। দূর পাহাড়ে আরও কিছু। পাহাড়ের শেষ কোথায় তারা জানে না। পাহাড়ের চাদরই তাদের পৃথিবী। তাদের জগৎ।
প্রাণগুলো পাহাড়েই বসত গাঁড়ে। পাহাড়েই আহার খোঁজে। পাহাড়েই স্বপ্ন বোনে। পাহাড়েই নিঃশেষ হয় প্রাণ। এ পাহাড়, ও পাহাড় বাড়ি খেয়ে আত্মাগুলো ভেসে বেড়ায়। দেহ মিশে যায় পাহাড়ের খাদে।
প্রাণগুলো পাহাড় ডিঙিয়ে ছুটে যায় আহারের সন্ধানে। বুনো কলা, বুনো ফল সংগ্রহ করে আনে ওরা। তীরধনুক নিয়ে ছুটে যায় একদল পুরুষ। বুনো শুয়োর, বুনো ইদুর, কীট-পতঙ্গ যা পায় ধরে এনে মেতে ওঠে আহার উৎসবে। নারীরা ছুটে যায় দূর পাহাড়ি ঝর্ণার কাছে। ছুটে আসে অন্য পাহাড়ের নারীরাও। পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া ছড়ায় দলবেঁধে জলকেলি করে ওরা। উচ্ছ্বল-ছলছল সুখে জল ছিটায় একে অপরের গায়ে। নিসৃত সুখ শেষে কাঁখে করে বয়ে আনে পিপাসার জল।
শিশুগুলো ছুটে বেড়ায় পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে।
ছুটতে ছুটতে উঠে যেত পাহাড়ের চূড়ায়, সুড়সুড়িয়ে নেমে আসতো উচ্ছ্বল চঞ্চল ছলছল ঝরনার মত। আহা কী আনন্দ। মাঝে মাঝে বন মোরগের মত বাঙ দিয়ে জানান দেয় প্রাণের অস্তিত্ব। সেই ধ্বনি ভেসে যায় দূরে। বহুদূরে…। পাহাড়ে পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হয় সেই সুর। ভেঙে খান খান হয়ে ঝরে পড়ে বৃষ্টির মত। আরেক পাহাড় থেকে ভেসে আসে প্রতিউত্তর। জানান দেয়; আছে.. আরো প্রাণ আছে..! পাহাড়ের কোলে কোলে.. পরতে পরতে আছে অদৃশ্য মনুষ্যপ্রাণ!
বড়ই সুখের সে জীবন। প্রকৃতির সাথে মিশে যায় প্রাণ। প্রাণ বাঁচে প্রকৃতির কোলে। নিখাদ সুন্দর সেই আবহমান প্রাকৃতজন। সুরময়। ছন্দময়। শিল্পিক জীবন!

হঠাৎ বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয় পাহাড়ি জনপদ। আতঙ্কিত প্রাণগুলো ধড়মড়িয়ে ওঠে। আড়মোড়া ভাঙে। চমকে আকাশের দিকে তাকায়। ঝলমল ধূসর নীল আকাশে মেঘের লেশমাত্র নেই। অথচ ভয়ংকর মেঘের গর্জন। হতবিহ্বল চোখগুলো খুঁজতে থাকে আকাশময়.. পাহাড়ময় প্রান্তরে! তারা দেখতে পায় পাহাড়ি জনপদ চিরে বিকট শব্দে উড়ে আসে কিছ! ঘাসফড়িঙের মত দেখতে প্রকা- এক মহাদানব। বনবন করে ঘুরছে তার পাখাগুলো! সাঁই সাঁই বাতাসে পাহাড়ি বনে প্রলয় বইতে থাকে। প্রকা- সেই দানব চক্কর দিতে তাকে মাথার উপর। সাঁই সাঁই সাঁই সাঁই… বনবন বনবন!

না। পাহাড়ি প্রাণ খুব একটা বিচলিত হয় না। প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে থাকাই যাদের জীবন; তারা খুব সহজে বিচলিত হয় না। শুধু স্তম্ভিতক্ষণটুকু পার করে। ভেবে নেয় কোন একটা কিছু। মগজে মগজে ঠিক করে নেয় করণীয়। আর তখনই কোন এক কণ্ঠ বন মোরগের মত বাঙ দিয়ে ওঠে। দানবের বিকট শব্দ ভেদ করেই সেই বাঙ ফেটে পড়ে সুতীব্র চিৎকারে। জানানা দেয় নির্দেশনা।
ওরা চেনে এই কণ্ঠ! ওরা জানে এই ডাক! ওরা জানে এখন কী করতে হবে।
মূহুর্তে একটি কণ্ঠ পরিণত হয় শতকণ্ঠে! হাজার কণ্ঠে!
নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ শিশু চকিতে ছুটে যায় গৃহে। ঝটকায় হাতে তুলে নেয় ধনুক। উল্কার মত ছুটতে থাকে তির। ক্ষতবিক্ষত হতে থাকে ফড়িঙের মত প্রকা- সেই দানব। যেন মাটি ফুঁড়ে বৃষ্টির সুতীক্ষè ধারা ছুটে যায় উর্ধাকাশে! মুহুর্মুহু তিরবর্ষণ! পরাহত হয় প্রতিপক্ষ। অতঃপর অবস্থা বেগতিক দেখে পালাতে বাধ্য হয় প্রকা- দানব। হাঁফ ছেড়ে বাঁচে পাহাড়ি প্রাণ।

কিন্তু এ দানব তো যে সে দানব নয়। এদানব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দানব। এই দানবের নাম সভ্যতা। এরা পৃথিবীর পরতে পরতে বপন করে সভ্যতার বীজ। এর সভ্যতার ঠিকাদার। সভ্যতার নির্মাতা। এদের অনুসন্ধানী চোখ সর্বদা খুঁজে ফেরে অনগ্রসর জীবন। খুঁজে ফেরে অসভ্য বুনো মানুষের আদিম জীবানাচার। প্রাকৃত পৃথিবীর মানচিত্রে এরা এঁকে বেড়ায় সভ্যতার কনক্রিট ভিত। এ দানবের মুখে ফোটে মানবতা, বুকে বিরাজমান বৈশ্যবণিক!

সভ্যতার সুদক্ষ, সুচারু বণিকেরা হাল ছাড়ে না। এতদিনের এত অনুসন্ধান বৃথা যেতে দেবে না। এত গবেষণা-পরিকল্পনা শেষ হয়ে যেতে পারে না। এত বিনিয়োগ এত সম্ভাবনা ভেস্তে যেতে পারে না। নির্মাতা বিশেষজ্ঞরা বুদ্ধি আঁটতে থাকে সুনিপুন কৌশলে। সভ্যতার মগজ চষে বের করে সেই বুদ্ধি। ওদের ভয় দূর করতে হবে। ওরা যেন শত্রু না ভেবে বন্ধু ভাবে তার ব্যবস্থা করতে হবে। এবার দায়িত্ব পায় পাবলিক রিলেশন বিভাগ। জনসম্পর্ক উন্নয়নই যাদের কাজ। দায়িত্ব পেয়েই কাজে নেমে পড়ে তারা।
সমস্ত প্রস্তুতি শেষে স্বতস্ফূর্ত চিত্তে আবার ফিরে আসে তারা এই জনপদে। দানব কপ্টার বিকট শব্দে ঘুরপাক খেতে থাকে পাহাড়ি জনপড়ে। পাহাড়ি প্রাণেও প্রস্তুত হয় লক্ষ্যভেদী তির। কিন্তু ধনুকের সর টান খাবার আগেই আকাশ থেকে ঝরতে থাকে তিরবর্ষণ। ওরা বৃষ্টি¯œাত হতে থাকে। কিন্তু কোন প্রাণহানি হয় না। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। ভাল করে খেয়াল করে দেখে, সুতীক্ষè তির নয়; বৃষ্টিতে ঝরে পড়ছে অসংখ্য চকলেট।
চকলেট বৃষ্টিতে ¯œাত হয় পাহাড়ি জনপদ। হরিলুটের মত ওরা লুটে নিতে থাকে চকচকে ফয়েল কাগজে মোড়া চকলেটগুলো। আহা কী সুমিস্ট! কী স্বাদ! কী ঘ্রাণ! এমন স্বর্গীয় স্বাদ কোন বন্যখাবারে পায়নি ওরা। আপ্লুত হয় ওরা; বিমোহিত হয়। ভুলে যায় ধনুকের খেলা; লক্ষভেদি বান। দানব কপ্টারটিকে আর দানব মনে হয় না তাদের। যেন স্বর্গের দেবদূত!
সভ্যতার কপ্টার বিজয়ের আনন্দে উড়ে চলে যায়।
কিন্তু পাহাড়ি মানুষ ভুলতে পারে না চকলেটের নেশাময় স্বর্গীয় স্বাদ। অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে; কবে আসবে সেই দেবদূত। কবে? মেঘের গর্জনেও সচকিত করে কান; চোখ খুঁজে ফেরে দিগন্তের ওপারে। আকাশ জুড়ে কালো মেঘগুলো দেখলে এখন দানব মনে হয়। মেঘ দানবের আড়াল ভেদ করেই হয়তো দেবদূত আসবে! কিন্তু কবে?
আসে। আবার আসে কপ্টার। দেবদূত কপ্টার! পাহাড়ি চোখগুলো লোভাতুর চকচকে হয়। আবারো চকলেট বর্ষণ। আবারো হরিলুট। দেবদূত চলে গেলে আবারো প্রতীক্ষা। আবারো নেশা জাগানিয়া অপেক্ষা।
এভাবেই সভ্যতার চকলেটে বশ হয়ে যায় পাহাড়ি পুরুষ-নারী-বৃদ্ধ-শিশুরা। দানব কপ্টার হয়ে ওঠে স্বর্গের দেবদূত।
চকলেট বর্ষণ নয়; অবশেষে একদিন স্বর্গের সিঁড়ি বেয়ে কপ্টার থেকে নেমে আসে কয়েকজন সভ্য মানুষ। ওদের মতই শরীর। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। তবু পাহাড়ি মানুষের চোখে ওদের ঠিক মানুষ মনে হয় না। কী সুন্দর পোশাক! রঙ! জ্যোতি! যেন সত্যিই ওরা স্বর্গের দেবদূত। নমঃনমঃ নত শিরে অভ্যর্থনা জানায় ওরা।
আগতরা জানায়, আমরা দেবদূত নই। মানুষ। তোমাদের মতই মানুষ।
হাজারো জিজ্ঞাসু চোখ অজ¯্র প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফেরে। মহান মানুষেরা বোঝায়, আমরাও মানুষ! তবে তোমাদের মত অসভ্য নই; সভ্য মানুষ।
অতঃপর ওরা নানা ভাবে বোঝাতে থাকে; এই পাহাড়ি জনপদ অসভ্য। বন্য! অনুন্নত! পশ্চাদপদ! তোমরা সাপ-ব্যাঙ-কীট-পতঙ্গ খাও। খাবার ঠিকমত ধুয়ে খাও না। তোমাদের শরীর ধুলো-কাদামাটিময়। থিক থিক করে জীবাণু। ঠিকমত হাত ধোও না। গোসল কর না। তোমরা বনে-বাদাড়ে উন্মুক্ত জায়গায় যেখানে সেখানে হাগো-মুতো। মানুষের গু-মুত জীবাণু ছড়ায়। তোমরা মলত্যাগ করে ভালমত হাত ধোও না। সাবান দাও না হাতে। ঠিকমত পোশাক পরোনা। পোশাক ধোও না। তোমরা রোগাক্রান্ত মানুষ। নখ কাটো না, চুলদাড়ি ঠিকমত কাটো না। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে তোমরা। তোমাদের জাগতিক শিক্ষা নাই। ভাষাও কেমন যেন সুন্দর সুশোভিত নয়। তোমরা সভ্য আচরণ জানো না। তোমাদের পরস্পর পরস্পেরের প্রতি সম্মানবোধ নাই। শিষ্টাচার নাই। তোমরা দলগত শৃঙ্খলা বোঝ না। তোমাদের জীবনধারা আধুনিক নয়।
তোমরা উন্নত আবাসন থেকে বঞ্চিত। উন্নত স্বাস্থ্যজীবন থেকে বঞ্চিত। শিক্ষার আনন্দ থেকে বঞ্চিত। তোমরা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পৃথিবীটা দেখার আনন্দ থেকে বঞ্চিত। বিজ্ঞান সম্মত আধুনিক মগজ থেকে বঞ্চিত। এক কথায় তোমরা পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠি!
কিন্তু তা তো হতে পারে না। তাহলে পশুর জীবন আর মানুষের জীবনের মধ্যে পার্থক্য কী? মানুষ তবে কেন সৃস্টির সেরা জীব? আর সেই সেরা জীব কি না মানবেতর দিন কাটাবে? অবহেলিত বঞ্চিত জীবন যাপন করবে? এটা হতেই পারে না।
সুতরাং তোমাদের নিরাপদ উন্নত আবাসন দরকার। উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। সাবান ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। গোসল করা শিখাতে হবে। হাত ধোয়া শেখাতে হবে। স্যানেটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার শেখাতে হবে। স্যানেটারি প্যাড ব্যবহার শিখতে হবে। স্যান্ডেল পরা শেখাতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত পোশাক পরা শিখাতে হবে। তোমাদের অনগ্রসর জীবনে ছড়িয়ে দিতে হবে উন্নত শিক্ষার আলো। স্কুল বানাতে হবে। হাসপাতাল বানাতে হবে। এক কথায় এদের সভ্য বানাতে হবে। আর এটা তোমাদের মানুষের অধিকার। আর এইসব অধিকার পুরণ করতেই আমরা এখানে এসেছি। যাকে বলে সভ্যতা।
খুব ভাল লাগে কথাগুলো। সুস্বাদু। স্বর্গীয় চকলেটের মতই সুস্বাদু। চকলেটের স্বাদ তারা চেখে দেখেছে। সভ্যতার স্বাদ এখনো দেখেনি। উদগ্রীব হয়ে ওঠে সেই স্বাদ পাওয়ার জন্য। নেশা নেশা আশা জাগে বুকে।

সভ্য মানুষ বোঝায়, অধীর হয়োনা। সভ্যতা একদিনে হয় না। নির্মাণ করতে হয় দিনে দিনে। ধাপে ধাপে। আর এর প্রথম সর্বপ্রথম ধাপ হলো রাস্তা। সভ্যতার রাস্তা। যে রাস্তা দিয়ে সভ্যতা আসবে।
শুরু হলো রাস্তা নির্মাণের কাজ। পাহাড় কেটে। জঙ্গল কেটে। লোকালয় কেটে।
চকলেট যতই সুস্বাদু হোক, এই জনপদে বেড়ে ওঠা মানুষের যৎকিঞ্চিৎ কষ্ট তো হচ্ছে বটেই! এই পাহাড় তাদের আদিভূমি। জঙ্গল তাদের আশ্রয়; অন্নদাতা। কেঠে ফেলার সময় কিছু কিছু বুকের পাঁজর তো মুচড়ে উঠলই! আর ওরা বাধা দিতে লাগল।
সভ্যতার র্নিমাতারা বুঝে গেল ব্যাপারটা। চকলেট লাগবে। চকলেট। অনেক অনেক চকলেট। নেশা নেশা চকলেট।
শুরু হলো আবারো চকলেট দান। এবার উপর থেকে বৃষ্টি নয়। কেউ রুখে এলেই ছুঁড়ে দেয়া। ওরা গাড়ি বহর নিয়ে আসেÑ চকলেট ছুঁড়ে দেয়। যাওয়ার সময় হাত নেড়ে টা-টা বাই-বাই জানায়। এতে কাজ হল। সভ্যতার সুস্বাদু চকলেট বলে কথা। ওরা চকলেট লুটে নেয়। কৃতজ্ঞচিত্তে হাত নেড়ে প্রতিউত্তর দেয়Ñ টা-টা বাই-বাই!
অতঃপর দিনে দিনে নির্মিত হলো সভ্যতার রাস্তা। সবুজ জনপদ চিরে কালো পিছঢালা রাস্তা। সভ্যজগৎ থেকে সাপের মত এঁকেবেঁকে এসে মিশে গেছে অসভ্যের দিগন্তে। পাহাড় কেটে। জঙ্গল কেটে। অসভ্যতার আবরণ কেটে।
রাস্তা দিয়ে একে একে আসতে শুরু করল সভ্য মানুষ। নানান রঙের, নানান বর্ণের মানুষ।
এত মানুষ! এত মাথা! তো তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই তো দরকার! সভ্য মানুষ তো আর অসভ্য কুটিরে থাকতে পারে না। পাহাড় কেটে কেটে বানানো হল সভ্যতার দালান। ইট পাথরের ইমারত। একটি নয় দুটি নয় অসংখ্য! কী অদ্ভুত সব নাম। সুন্দর সুন্দর নাম। পাহাড়ের নাম! কটেজের নাম! রিসোর্টের নাম! পাহাড়ের আদিম অসভ্য নামগুলো বদলে গেল! নীল নীল নাম! নীলচূড়া… নীলাভূমি… নীলাঞ্জনা.. নীলাকাশ.. নীলাশা..! আহা! শুনলেই চিত্ত প্রশান্ত হয়ে যায়। সাহিত্যের পরতে পরতে নামকরণের সুসভ্য সুখ!

এই পাহাড়ি জনপদ এখন সভ্যদের দখলে। তারা দলে দলে আসে। গাড়ি ভরে ভরে আসে। কিছুদিন থাকে। আনন্দ করে। হৈচৈ করে। প্রকৃতির গহীন থেকে শুঁষে নেয় সুখ সুখ নির্যাস! বুক ভরে নিয়ে যায় বিশুদ্ধ বাতাস… প্রাকৃত বন্য সুখ… নিসর্গের প্রশান্তি। আর রেখে যায় সভ্য জীবনের বর্জ্য! উগলে ফেলে যায় নাগরিক জীবনের বিষ্ঠা! বৈভবের ক্লান্তি।
আর নীল পাহাড়ের দেশে সভ্যতার বণিকেরা দিনে দিনে লাল হতে থাকে।

না! পাহাড়ি বন্য অসভ্য মানুষগুলো একেবারে বঞ্চিত হয়নি। ভাগ্য না বদলালেও অভ্যেস বদলে গেছে। এখন তারা অতিথিদের খেদমত করে! তদারক করে। সেবা করে। বন্যখাবার… বন্যশিল্প, বন্যসুখ খুঁটে এনে তুলে দেয় বণিকদের হাতে। ওরা সেগুলো সভ্যতার ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে চড়াদামে বিক্রি করে রিসোর্টগুলোতে। বিনিময়ে পাহাড়িরা দুচার পয়সা যা পায় তাই দিয়ে খুঁজে মরে সুস্বাদু চকলেট!
এদিকে শিশুরা গাড়ির শব্দ পেলেই আশায় বুক বেঁধে ছুটে আসে রোজ। চকচকে লোভাতুর চোখ নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে পিচঢালা পথের বাঁকে বাঁকে। চকলেট বৃষ্টির আশায় অতিথিদের হাত নেড়ে টা-টা দেয়!
কিন্তু গাড়িগুলো হৈহৈ রৈরৈ করতে করতে রোজ চলে যায়। ওরা রোজ সকালে আশাহত হয়। রোজ রাতে আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করে- আবার সকাল হবে! আবার! কোন এক সকালে হয়তো চকলেটবৃষ্টি ঝরবে!
সভ্যতার চকলেট।