জাহিদ হাসান, স্টাফ রিপোর্টার: নাটোরের লালপুর উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে সেচ প্রকল্পে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েই চলেছে।
গত ছয় মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ৩০টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এসব ট্রান্সফরমারের বাজারমূল্য প্রায় ২১ লাখ টাকা। সেচ ব্যবস্থায় বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় আগামী মৌসুমে ফসল উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, বিএমডিএ, বিএডিসি ও লালপুর থানা সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মাত্র ১০ দিনে ৯টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এতে কৃষক ও সেচ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, চুরি ঠেকাতে পাহারা দিয়েও লাভ হয়নি। গত শনিবার রাতে আমার নলকূপের তিনটি ট্রান্সফরমারের সব যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে গেছে চোরেরা। সাম্প্রতিক আরও কয়েকটি ঘটনায় রামকৃষ্ণপুর, ঢুষপাড়া, রামানন্দপুর, ছোট বিলশলিয়া ও অন্যান্য এলাকায় কৃষকদের মালিকানাধীন ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে বলে জানা গেছে। জুলাই ও আগস্ট মাসেও অন্তত ৯টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটে।কচুয়া গ্রামের কৃষক নাজমুল হক অভিযোগ করে বলেন, আমার পাঁচটি ট্রান্সফরমার দু’দফায় চুরি হয়েছে। প্রতিটি নতুন ট্রান্সফরমার কিনতে ৭০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ আবার পরীক্ষার নামে সাড়ে তিন হাজার টাকা নিয়েছে। কেন আমরা অতিরিক্ত হয়রানি ও খরচের শিকার হব বুঝতে পারছি না।
রামানন্দপুরের সাবেক শিক্ষক শফিউল্লাহ বলেন, আল্লাহর ভয় দেখাতে ট্রান্সফরমারের গায়ে দোয়া লিখেছিলাম, খুঁটির ফাঁক বন্ধ করেছি, কাঁটা তার লাগিয়েছি, তবুও দুইটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে গেল। এর বাজারমূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা। কৃষকদের অভিযোগ, পল্লী বিদ্যুতের নিজস্ব ট্রান্সফরমারগুলো সাধারণত চুরি হয় না, বরং ব্যক্তি মালিকানাধীন ট্রান্সফরমারগুলোই লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে। তাদের ধারণা, চোরচক্রের সঙ্গে কিছু অসাধু ব্যক্তির যোগসাজশ থাকতে পারে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–২ লালপুর জোনের ডিজিএম রেজাউল করিম বলেন, “একটি সংঘবদ্ধ চক্র পরিকল্পিতভাবে এসব চুরি করছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। গ্রাহকদের সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি।
বিএমডিএ বড়াইগ্রাম জোনের উপসহকারী প্রকৌশলী আবুল বাশার বলেন, আমরা বুয়েট টেস্ট করা ট্রান্সফরমার সরবরাহ করি। নিয়ম অনুযায়ী সংরক্ষণ মালিকের দায়িত্ব। চুরির বিষয়ে আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।বিএডিসি বড়াইগ্রাম জোনের সহকারী প্রকৌশলী জিয়াউল হক বলেন, “লালপুরে আমাদের চারটি গভীর নলকূপ আছে, এখনও সেখানে চুরি হয়নি। তবে বড়াইগ্রামে বেশ কয়েকটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। কৃষকদের সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।লালপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, “কয়েকটি জিডি করা হয়েছে। চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধারে ও চোরচক্র গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
স্থানীয়রা মনে করছেন, ট্রান্সফরমার চুরি রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আসন্ন মৌসুমে সেচের সংকট তৈরি হবে, যা কৃষি উৎপাদনে বড় ধরনের ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।
– জাহিদ হাসান, স্টাফ রিপোর্টার, বড়াইগ্রাম



