মোঃ মামুনুর রশীদ : রমজান মাসে মাছের কোন ঘাটতির আশঙ্কা নেই জানিয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডঃ মোঃ আব্দুর রউফ বলেছেন, দেশ মৎস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, বিদেশেও মাছ রপ্তানী হচ্ছে। গেল বছর দেশে ৪৯ দশমিক ১৫ লাখ টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। এরমধ্যে বিদেশে রপ্তানী হয়েছে ৪ হাজার ৯৭০ কোটি টাকার মাছ।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতে জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার বৃ-পাথুরিয়া বাজারে মৎস্য চাষী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চার জেলার মৎস্য চাষীদের অংশগ্রহণে নাটোরে এক মৎস্য চাষী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন, মৎস্য চাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোঃ আব্দুস সালাম মিয়া।
সম্মেলনে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, বর্তমান সরকার মৎস্য খাতে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিল ১৪ টাকা থেকে হ্রাস করে কৃষি খাতের মত ইউনিট প্রতি চার টাকা নির্ধারণে কাজ শুরু করেছে। মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে দ্রুত তা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করা হবে। আশাকরি অতি দ্রুত মৎস্য চাষীদের প্রাণের এই দাবী পূরণ হতে যাচ্ছে। মহাপরিচালক বলেন, ক্রমবর্ধমান উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে দেশে জনপ্রতি ৬০ গ্রাম মাছের চাহিদার বিপরীতে আমরা গ্রহণ করছি ৬৭ গ্রাম করে। অর্থাৎ প্রতিদিন সাত গ্রাম করে অতিরিক্ত মাছ গ্রহণ করতে পারছি আমরা। নিরাপদ মাছ গ্রহণ করে আমিষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে, গড়ে উঠছে বুদ্ধিদীপ্ত জাতি। তিনি বলেন, রমজান মাসে মাছের ঘাটতি হবে এমনটা আমরা আশঙ্কা করি না। কেননা, প্রতিবছরই আমাদের রমজান মাসে মাছের সরবরাহ বেশি হয়। বাজারে বেশি চাহিদা থাকে মনে করে অনেক চাষী রয়েছেন যারা রমজান মাসকে কেন্দ্র করেই পুকুরে মাছ ধরেন। ফলে রমজান মাসে মাছের সরবরাহ কম হওয়ার আশঙ্কা নেই। ডঃ মোঃ আব্দুর রউফ বলেন, জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন মৎস্য চাষীবৃন্দ। কার্প জাতীয় মাছ উৎপাদনে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মহারাজপুর সারাদেশে অগ্রগামী এবং অনুকরণীয়। অতি দ্রুত এই এলাকার মৎস্য চাষীদের স্বার্থে একটি ভ্রাম্যমান ল্যাবের কার্যক্রম চালু করা হবে। পুকুর সংস্কারে প্রশাসনিক হয়রানি বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং গুণগতমানের মৎস্য খাদ্য নিশ্চিতকরণে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা হবে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, নাটোর জেলা থেকে প্রতি বছর স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে ৩৭ হাজার টন উদ্বৃত্ত মৎস্য রাজধানীসহ দেশের ঘাটতি এলাকায় যাচ্ছে এবং আমীষ উৎপাদনের মাধ্যমে মেধাবী জাতি গঠনে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। মৎস্য চাষীরা তাদের বক্তব্যে পুকুর সংস্কারে প্রশাসনিক হয়রানি বন্ধ, মৎস্য ক্ষেত্রে শিল্পের পরিবর্তে কৃষি শ্রেণীতে বিদ্যুৎ বিল প্রদানে ব্যবস্থা গ্রহণ, ভ্রাম্যমান মৎস্য পরীক্ষাগার ব্যবস্থা চালু, মৎস্য হিমাগার স্থাপন, রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম চালু, বাজারে গুণগতমানের মৎস্য খাদ্য নিশ্চিত করা ইত্যাদি দাবি উপস্থাপন করেন। সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, নাটোরের পুলিশ সুপার মোঃ আমজাদ হুসাইন, মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডঃ এস এম রেজাউল করিম, উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা) শাহেদ আলী, রাজশাহী বিভাগীয় উপ পরিচালক আব্দুল ওয়াহেদ মন্ডল, গুরুদাসপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুল ইসলাম, মৎস্য চাষীদের মধ্যে রাকিবির রহমান, আব্দুল্লাহ আল কাফী, শফিকুল ইসলাম, মোঃ তবারকউল্লাহ, জাকির হোসেন প্রমুখ। সম্মেলনে নাটোর ছাড়াও রাজশাহী, পাবনা এবং সিরাজগঞ্জের মৎস্য চাষীরা অংশগ্রহণ করেন। পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।