প্রান্তজন রিপোর্ট: নিছক খেয়ালের বশে জনপ্রতিনিধি হতে চাওয়া। তবে আন্তরিকতা ও একাগ্রতার অভাব ছিলো না।সংসার থেকে উঠে আসা একজন সাধারন নারী যে এলাকার সর্বস্তরের মানুষের প্রত্যাশার পীঠস্থানে পরিণত হতে পারেন তার অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নাটোর জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার অদম্য আয়মন বেগম।একজন সাধারণ নারী হয়েও আচরণে, কর্মে, সহযোগিতায় কিংবা সহমর্মিতায় অসাধারণ হয়ে উঠেছেন তিনি। তিনি নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য। নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল ইউনিয়নের সেনভাগ গ্রামে বাস করেন আয়মন বেগম। ২০১১ ও ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। মানুষের আস্থা ও নির্ভরযোগ্যতা সংসার থেকে তাকে জনপ্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে মানুষের সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন। আয়মন বেগমের বয়স এখন পঞ্চাশের কোঠায়। আশির দশকের শুরুর দিকের দেশের সামাজিক বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে ১৫ বছর বয়সে তাকে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়েছিল। নতুন জীবনে অভাব ও দারিদ্র্যের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তাকে।আয়মন দুই সন্তানের মা হন।তার স্বামী ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য। একদিন কথার ছলে আয়মন জানান যে তার স্বামী ইউপি সদস্য হলে তিনিও সংরক্ষিত ইউপি সদস্য হতে পারেন। তার কথায় সায় দেন স্বামী।তারপর থেকে আয়মন গণসংযোগ বাড়াতে থাকেন।২০১১ সালের ইউপি নির্বাচনে আয়মন সংরক্ষিত ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। নিজের কষ্টের কিছু সঞ্চয় একত্রিত করে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের থেকে ঋণ নিয়ে গরু পালন ও ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করেন আয়মন।আয়মনের দিনযাপন গ্রামের আর দশটা সাধারণ বধুর মত হলেও মানুষকে সহযোগিতা ও বিপদ-আপদে ছুঁটে যাওয়া তাকে খুব দ্রুত গ্রহণযোগ্য করে তোলে নিজ গ্রাম সেনভাগবাসীর কাছে।এলাকাবাসী তাদের যে কোন প্রয়োজনে ডাকলেই পান আয়মনকে। এভাবে বাড়তে থাকে মানুষের সাথে যোগাযোগ,গড়ে ওঠে হৃদ্যতা। ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো এলাকার সর্বস্তরের মানুষের ভোটে ইউপি নির্বাচনে সংরক্ষিত ইউপি সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন নাজমা। প্রথমবারেই বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ইউনিয়ন পরিষদে বসার সুযোগ পেলেন।তবে ২০১৬ সালের নির্বাচনে পরাজিত হন তিনি।তবে হাল ছাড়েননি। দায়িত্বশীল আচরণ ও ভোটারদের আশা আকাংখ্যা পূরণ করায় ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে পুনরায় বিপুল ভোটে জয়ী হন আয়মন। আয়মন বেগম জানান, স্থানীয় সরকার পরিচালনায় একজন সাধারণ সদস্যের চেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয় একজন সংরক্ষিত নারী সদস্যকে।এই বাস্তবতাকে কেউ মেনে নিতে চান না।যেখানে একজন পুরুষ সদস্য শুধু একটি ওয়ার্ডের দায়িত্ব পালন করেন সেখানে একজন নারী সদস্য তার তিনগুন কাজ করছেন।পুরুষ সদস্যকে না পেলে নারী সদস্যের কাছেই আসে সাধারন মানুষ।তারা দ্রুত সেবা চায় যা একজন নারীই পারে নিষ্ঠার সাথে দিতে।তবে নির্মম বাস্তবতা এই যে একজন নারী সদস্য যে অল্প পরিমাণ সম্মানী পান তা দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদে যাতায়াতের খরচও মেটে না। স্থানীয় সরকারের নারীদের শক্তিশালী করতে সবার আগে প্রয়োজন আর্থিক নিশ্চয়তা।
আয়মন বেগম বলেন, ইউপি সদস্য হিসেবে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্যের আওতা পরিধি, সার্বিক জ্ঞান, দক্ষতা, প্রশিক্ষণ, পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অপরাজিতা প্রকল্প অনেক সাহায্য করেছে।এই প্রকল্পের মাধ্যমে মেহেরপুর, রাজশাহী, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলা সফরে অভিজ্ঞতা বিনিময় সম্ভব হয়েছে যা স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে সক্রিয় তৃণমূল প্রশাসন পরিচালনায় ভূমিকা রেখেছেন। আয়মন বলেন, সাধারণ মানুষের সাথে থাকতে ও মিশতে ভালো লাগে। মানুষের ভালোবাসা নিয়ে পথ চলতে চাই।আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদের সাধারন আসনে নির্বাচনের ইচ্ছা নিয়েই মানুষের সাথে মিলেমিশে কাজ করছেন।