8.9 C
New York
Friday, August 8, 2025
No menu items!
Homeজেলার খবরপ্রত্যন্ত গ্রামের লাভলী, নারীদের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি আজ তিনি সংরক্ষিত এমপি প্রার্থী

প্রত্যন্ত গ্রামের লাভলী, নারীদের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি আজ তিনি সংরক্ষিত এমপি প্রার্থী

প্রান্তজন রিপোর্ট: পুরুষশাসিত সমাজধারায় অর্থনৈতিক যোগ্যতা ছাড়া একজন নারীর প্রতি পদক্ষেপ যে কঠিনতর এবং তা থেকে উত্তরণে নারীর নিজের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দরকার তা প্রমাণ করেছেন নাটোরের অন্যতম নারী সংগঠক লাভলী ইয়াসমিন।এই ভাবনা থেকেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি সমিতি।এ সমিতি বদলে দিয়েছে কয়েকশ’ নারীর ভাগ্য।তাদের করে তুলেছেন উপার্জনক্ষম, সাহসী ও আত্নপ্রত্যয়ী।লাভলী ইয়াসমিন নাটোর জেলা পরিষদের সংরক্ষিত সদস্য।
নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের আমহাটি গ্রামের নারী সংগঠক লাভলী ইয়াসমিন।তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন যুব মহিলা লীগের নাটোর সদর উপজেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।পুরোদস্তর রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসা লাভলী প্রতিষ্ঠা করেছেন আমহাটি নারী জাগরণী সমিতি। এই সমিতিই স্থানীয় নারীদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে।স্বামীর আয়ের উপর নির্ভরশীল নারীরা এই সংগঠনের মাধ্যমে উপার্জনের পথ খুঁজে পেয়েছেন। তবে লাভলী ইয়াসমিনের চলার পথটা সহজ ছিলো না।
আজকের সফল নারী সংগঠক লাভলী নিজেও বাল্যবিয়ের শিকার। লাভলী যখন অস্টম শ্রেণিতে পড়ে তখন তিনি বিয়ের পিড়িতে বসেন। ১৯৯৯ সালে নতুন সংসার সামলিয়ে এসএসসি, ২০০১ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দেন লাভলী। ১৯৯৯ সালেই প্রতিষ্ঠা করেন নারী জাগরণী সমিতি। সমিতির কাজের মাঝে মাঝে পড়াশোনা অব্যাহত রেখে শেষ করেন ডিগ্রি পাস। এরপর রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। প্রথমে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ ও পরে যুব মহিলা লীগের নেতৃস্থানীয় পদের দায়িত্ব নিয়ে নারীর আর্থিক ক্ষমতায়নের কাজে জোর দেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে উপার্জনক্ষম নারীদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে তাদের দক্ষতার উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে তার সমিতিতে ৩৫ জন নারী থাকলেও কয়েকশ নারীকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন। তার সমিতি ২৫ জন অসহায় নারীকে সেলাই মেশিন দিয়েছেন।
লাভলী ইয়াসমিন ২০১১ সাল থেকে অপরাজিতা প্রকল্পের সাথে যুক্ত হন। তখন অতিথি হিসেবে অপরাজিতার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। অপরাজিতার কাজগুলো ভালো লাগায় তিনি নিজে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। লাভলীই একমাত্র জেলা পর্যায়ের সদস্য যিনি অপরাজিতার কেন্দ্রীয় কমিটিতেও প্রতিনিধিত্ব করছেন। লাভলী স্বীকার করেন জেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়লাভ করা তার জন্য সহজ করেছে অপরাজিতা। জেলা পরিষদের ভোটাররা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই প্রকল্পের হওয়ায় তার পূর্বপরিচিত যারা, তার নির্বাচনী প্রচারণা সহজ করে বিজয়ের পথ সুগম করেছেন।
লাভলী ইয়াসমিন বলেন, আর্থিক স্বাধীনতা নারীদের সামাজিক বা অর্থনৈতিক পটভূমিকা নির্বিশেষে আরো বেশি সুরক্ষিত এবং সম্মানিত করে। আর্থিক স্বাবলম্বিতা নারীকে পরনির্ভরশীলতা থেকে বাঁচায়। নারী আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলে পরিবারে-সমাজে সে নিজেকে অনেকটাই নিরাপদ করতে পারে, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন থেকে বাঁচতে পারে। কারণ বেশীরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা তাদের প্রতি সহিংসতা-নির্যাতন মেনে নেয় তাদের আর্থ-সামাজিক, মূলত আর্থিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে। কিন্তু নারীকে বেশীরভাগ পুরুষ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে দেয় না। নিম্নবিত্তঘরের মেয়েদের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। নিম্নবিত্ত পরিবারে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা নানাভাবে স্ত্রীদের নির্যাতন করে যৌতুকের কারণে। এসব স্বামীরা স্ত্রীর হাতে টাকা দেয় না। বাপের দেয়া অর্থ-সম্পদও কেড়ে নেয়। বেশীরভাগ স্বামী, স্ত্রীর সম্পদ বা আয় নিজের মনে করে এবং নিজের করায়ত্তে রাখে জোর করে। স্ত্রীর উপার্জনে স্বামীর কোন হক নেই বা স্ত্রী স্বেচ্ছায় না দিলে সেটা সে নিতে পারে না, এটা তারা মানে না। ফলে উপার্জনক্ষম নারীরাও নিজের আয় ইচ্ছামত ব্যয় করতে পারে না। আমার সংগঠন এবং কার্যক্রমের মাধ্যমে নারীদের উপার্জনক্ষম ও আত্নমর্যাদাসম্পন্ন নারী মনন গঠনে ভূমিকা রেখে চলেছি যেন নারী উপার্জনক্ষম ও সাহসী হতে পারে।
লাভলী ইয়াসমিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসন-৩৪৩ (নাটোর-নওগাঁ) থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি বলেন, আমি একজন সাধারণ নারী সংগঠক ছিলাম। আমাকে জনপ্রতিনিধিত্বে উদ্বুদ্ধ করেছে অপরাজিতা প্রকল্প যার ফলে আমি জেলা পরিষদ সদস্য। এই ধারাবাহিকতাকে অব্যাহত রাখতে আমি এবার সংরক্ষিত সংসদ সদস্য হিসেবে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছি। আমার বিশ্বাস সুযোগ পেলে আমার জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগতে পারব।

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments