8.9 C
New York
Friday, August 8, 2025
No menu items!
Homeমতামতনাটোরে খুনখারাবি বন্ধে তৎপর হোন / -এস, এম, সেদরুল হুদা

নাটোরে খুনখারাবি বন্ধে তৎপর হোন / -এস, এম, সেদরুল হুদা

সকল দুষ্কর্মের উৎপত্তি অজ্ঞতা থেকে। আগের মত এখন আর মানুষ অশিক্ষিত, মূর্খ ও নির্বোধ নেই। সমাজে শিক্ষিতের হার অনেক বেড়েছে। পেশা ও জীবন মান উন্নত হয়েছে। দেশে একটি নির্বাচিত সরকার রয়েছে। রাষ্ট্রকে সঠিক পথে পরিচালনার উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্টরা তৎপর রয়েছে। তবুও কেন খুনখারাবির মত অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেই চলেছে।
গত ১৬ই এপ্রিল নাটোর পৌরসভা চত্তরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক যুবক নিহত হলো। এ নিষ্ঠুর হিংস্র ঘটনা কেবল বাবা-মা কে দুঃখ কষ্ট দিয়েছে তা নয়। এটি নাটোরবাসীকেও ব্যথিত করেছে। ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নির্বিঘ্নতা নিয়ে অনেকেই এখন শংকিত ।
জোর যার মল্লুক তার এটা কেন হবে? আমরা একটি উন্নত জাতি। আমাদের সভ্যতা সংস্কৃতি সবই আছে। কিন্তু আমরা আচরণ ও মূল্যবোধ কে ধরে রাখতে পারছি না। এর কারণ একটাই সেটা হলো সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা। এ দুটি বিশ্বাস নিয়ে অনেক কিছুই করা সম্ভব। কিন্তু আমরা তা করিনা। ফলে দুর্ভোগ ও অশান্তি বেড়েই চলেছে আমাদের জীবনে। আমাদের আচরণকে সংযত করতে হবে। লোভ-লালসাকে প্রতিহত করতে হবে। মানুষ সামাজিক জীব। তাই সমাজ মানুষের কাছ থেকে সামাজিক আচরণ প্রত্যাশা করে। সামাজিক আচরণ হচ্ছে বৈধ ও অনুমোদিত আচরণ। কখন কার সাথে কিরুপ আচরণ প্রদর্শন করতে হবে তার শিক্ষা আমরা সমাজ থেকেই পাই। আচরণ সম্পর্কে জ্ঞানই হচ্ছে মূল্যবোধ। মূল্যবোধ সব সময় কল্যাণকর হয়। সাম্প্রতিক সময়ে শিশু হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই, সন্ত্রাশ, মাদকাসক্তি, নকল প্রবণতা ইত্যাদি দেখে মনেহয় মূলবোধের চরম অবক্ষয় হয়েছে দেশে। সমাজ প্রত্যাশিত আচরণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
সাধারণত কোন ব্যক্তির মধ্যে অগ্রসরমাণ, কল্যাণকর, রুচিশীল, সুস্থ বুদ্ধি সম্পন্ন সংস্কৃতির পর্যাপ্ত উপস্থিতি দেখলে মানুষ তাকে ভদ্র বা সভ্য বলে মনে করে। মানুষ যে দিন থেকে দলবদ্ধভাবে খাদ্য সংগ্রহ, শিকার ও অন্যান্য প্রয়োজনে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক সূচনা করেছে সেদিন থেকেই সভ্যতার উৎপত্তি। এ জন্য অনেক মনীষী সামাজিক সম্পর্ককে সভ্যতা বলে উল্লেখ করেছেন।
একটি দেশের ভবিষ্যৎ হলো সে দেশের তরুণ সমাজ। এ ভবিষ্যতকে নষ্ট করার অপকৌশল হচ্ছে অপসংস্কৃতকে উৎসাহিত করা এবং তা বাস্তবে প্রয়োগ করা। আমাদের সমাজের তরুণ-তরুণীদের উপর অপসংস্কৃতির কু-প্রভাব অতি গভীর ও ব্যাপক। কারণ এতে চমক আছে, উত্তেজনা আছে আর আছে ক্ষণিক আনন্দ ও মোহ। তরুণরা চঞ্চল, তারা চায় নতুন কিছু করতে। কিন্তু নতুন কিছু করতে গিয়ে শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সেটা তারা বুঝতে পারছে না। তাদের ধ্বংস তারা বুঝতে পারছে না।
আমাদের সমাজে যে অপসংস্কৃতি ঢুকে পড়েছে তার মূলে রয়েছে অবাধ দুর্নীতি। দুর্নীতি পরায়ন সমাজ টিকে থাকতে পারে না। সত্য ও সুন্দরকে ত্যাগ করে তরুণ সমাজ তাই আজ উগ্র জীবন-যাপনে উৎসাহিত হয়ে উঠেছে।
বর্তমান সমাজে সংহতির সমস্যা চরমে। সামাজিক উন্নতি ও শৃংখলার জন্য সংহতি অপরিহার্য। সংহতি হচ্ছে একতা বা সম্মিলিতভাবে সহ অবস্থান। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য সবাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। একধরণের ফর্মাল সম্পর্ক মেনে চলে। সহযোগিতার পরিবর্তে অসহযোগিতা দেখা যায় বেশি। আর এই সংহতির সমস্যা থেকেই সমাজে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। খুন, ছিনতাই, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, অপহরণ, মুক্তিপণ, চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের শতশত অপরাধ প্রতিদিনি এ দেশে ঘটছে। সংহতির চরম অবক্ষয় কেবল এমন নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সময় থাকতে এটা নিয়ে কেও ভাবছে না।
অপরদিকে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিতে সংহতির ক্রান্তিকাল চলছে। রাজনৈতিক দল এবং নেতা-নেত্রীর মধ্যকার বৈরী সম্পর্ক তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত। ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনের কোথাও সম্প্রীতির ছায়া নেই। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নানাভাবে হয়রানি যেন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায় সমাজের সর্বত্রই সংহতির তীব্র সংকট বিরাজমান। সমাজের প্রতিটি স্তরেই দ্বন্দ্ব, প্রতিযোগিতা, অবিশ্বাস, মূল্যবোধহীনতা কাজ করছে। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। দেশ ও জাতির সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য এ দুর্ভাগ্যজনক অবস্থার যবনিকা হোক এটাই প্রত্যাশা।
লেখক: এস,এম, সেদরুল হুদা, দি ডেইলী অবজারভার এর নাটোর জেলা প্রতিনিধি।

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments