8.9 C
New York
Friday, August 8, 2025
No menu items!
Homeবিশেষ সংবাদ“নববধু থেকে আত্মপ্রত্যয়ী জেলা অপরাজিতা নেটওয়ার্ক সভাপতি চলনবিলের খাদিজা খাতুন”

“নববধু থেকে আত্মপ্রত্যয়ী জেলা অপরাজিতা নেটওয়ার্ক সভাপতি চলনবিলের খাদিজা খাতুন”

প্রান্তজন রিপোর্ট: চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলার নারীদের আত্মপ্রত্যয়ী, অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাবলম্বী ও আত্ননির্ভর করার লক্ষ্যে কাজ করে চলছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা খাদিজা খাতুন। সমাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার খাদিজা খাতুন স্বপ্ন দেখেন এক নতুন দিনের যেখানে কোন নারীকে সমাজ পিছিয়ে রাখবে না প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা থেকে।ঝরে পড়া কন্যা শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমে ফেরানোর মাধ্যমে শিক্ষিত করার পাশাপাশি অধিকার সচেতন করার ব্রত নিয়ে কাজ করে চলছেন অপরাজিতা খাদিজা খাতুন। তবে খাদিজা খাতুনের এই পথচলা সহজ ছিলো না। রুঢ় সামাজিক বাস্তবতায় জীবনের শুরুর দিনগুলোতে হোঁচট খেয়েছেন তিনি। তবে দৃঢ়তার প্রত্যয় নিয়ে তিনি একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। খাদিজার বয়স যখন ১৫ তখন তাকে বিয়ের পিড়িতে বসায় পরিবার। খাদিজার কিশোরি মননে এই বাল্য বিয়ে দাগ কাটে। নিরুপায় খাদিজা তখন নিজ অবস্থান থেকেই যুদ্ধ শুরু করেন প্রতিকূল পরিস্থিতির সাথে। একদিকে নতুন সংসার আরেকদিকে নিজের জীবন, খাদিজা এই দুয়ের সমন্বয় করেছেন অসাধারণ নৈপূণ্যে। এভাবেই সংসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অর্জন করেছেন শিক্ষা। এই পথ পরিক্রমায় সামনে আসা প্রতিটি প্রতিবন্ধকতা জয় করে সেসব নিয়েই চিন্তাভাবনার পাশাপাশি কাজ শুরু করেছেন তিনি। যেসব সমস্যা তিনি সামনে পেয়েছেন সেসব সমস্যা সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের।বাল্য বিয়ে, নারী নির্যাতনের এসব সমস্যার সমাধানের উপায় সচেতনতা সৃষ্টি যা অত্যন্ত সফলভাবে তিনি সম্পন্ন করেছেন।এসব প্রতিকূল পরিস্থিতি তাকে আইন সম্বন্ধে জানার প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করিয়েছে। সেই ভাবনা থেকে খাদিজা আইন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেছেন। সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নেতৃত্বের গুণাবলির বিকাশ ঘটেছে খাদিজার।নারীদের সংগঠিত করে সামাজিক বিভিন্ন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে নেত্রীস্থানীয় অবস্থান আসার পর তিনি যোগ দেন যুব মহিলা লীগে। বর্তমানে খাদিজা সিংড়া উপজেলা যুব মহিলা লীগ সভাপতি। তিনি ২০২২ সালে নাটোর জেলা পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদে অংশ নেন।তবে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।তবে তিনি থেমে যাননি। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য কাজ শুরু করেছেন তিনি। রাজনীতির পাশাপাশি খাদিজা একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি নিজেই হাঁস-মুরগির খামার পরিচালনা করেন।তার খামারে ১৫০টি হাঁস ও ৬০০টি মুরগি রয়েছে।তার নিজের ১৩ বিঘা জমিতে করেন ধানসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ। এর পাশাপাশি খাদিজা বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ বিশেষ করে হস্তশিল্প, গবাদি পশু পালনসহ নানা ধরনের কার্যক্রমে নিজে সম্পৃক্ত থাকেন। তিনি নিজে গ্রামের অনান্য স্বাবলম্বী হতে চেষ্টাশীল নারীদের জন্য প্রশিক্ষণসহ নানা রকম প্রয়োজনীয় তথ্যসেবা দিয়ে থাকেন। ২০১৯ সালে খাদিজা অপরাজিতা প্রকল্পের সাথে যোগ দেন। অপরাজিতা প্রকল্প নারীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও প্রশিক্ষণের সুযোগ দিয়ে খাদিজাকে সামাজিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করে জেলা অপরাজিতা নেটওয়ার্ক সভাপতি হিসেবে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এখান থেকে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন উদ্যমে নিজ এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেন খাদিজা। খাদিজা খাতুন বলেন, আমি নিজে ছিলাম বাল্য বিবাহের শিকার। একজন নারীকে চলার পথে কতটা বাধা অতিক্রম করতে হয় তা জানার ও মোকাবিলার সুযোগ হয়েছে আমার। আমার সেই অভিজ্ঞতাগুলো আমি অনান্য নারীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই।আমি দেখেছি নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে আইন জানা আবশ্যক। আমি তাই নিজেও আইন বিষয়ে পড়াশোনা করছি। আমি স্বপ্ন দেখি একটি সুন্দর বাংলাদেশের যেখানে নারী সকল প্রকার বৈষম্য ও নির্যাতন মুক্ত হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে।

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments