প্রান্তজন রিপোর্ট: নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের করোটা গ্রামের নাসিমা বেগম এলাকায় পরিচিতি অর্জন করেছেন অসহায় নারী-পুরুষের বিপদের বন্ধু হিসেবে। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া নারীদের সমাজের মূলস্রোতে আনার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখে এলাকাবাসীর আস্থা ও ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছেন তিনি। বিগত ১০ বছর ধরে নিজেকে অপরের প্রয়োজনে নিযোজিত রেখে চলেছেন। নাসিমা বেগম দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। জীবন থেকে নেয়া রূঢ় অভিজ্ঞতা চলার পথের প্রতি ধাপে নাসিমা বেগমকে শিখিয়েছে নারীদের অধিকার সচেতন হতে। তিনি যখন ৫ম শ্রেণিতে পড়েন তখন তাকে বিয়ে দেয় পরিবার।অপরিণত বয়সে বাল্যবিবাহের ধকল শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে সংসার জীবনে নাসিমাকে।কঠিন সেই পরিস্থিতি ধৈর্যের সাথে মোকাবিলা করা নাসিমা চান তার পরিণতি যেন অন্য কাউকে ভোগ করতে না হয়। তাই গত ১০ বছরে নিজ এলাকার অর্ধশতাধিক বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছেন তিনি। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন সাধ্যমতো। এলাকার নারী-পুরুষরা যে কোন সময় যে কোন প্রয়োজনে তার সহযোগিতা পান। নাসিমা বেগম বলেন, গ্রামের নারীরা অধিকাংশই সহজ-সরল। তাই তারা তাদের প্রাপ্য অধিকারের ব্যাপারে ততটা সচেতন নয়। এই সুযোগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নারীদের প্রাপ্য নানারকম সরকারি সহায়তা থেকে তাদের বঞ্চিত করে। আমি চেষ্টা করি সেসব নারীদের পাশে দাঁড়ানো। নাসিমা বেগম আরো বলেন, যাদের সামর্থ্য নেই তাদের জন্য সরকার বিনা খরচে আইনী সেবার ব্যবস্থা করে রেখেছেন।কিন্ত অনেক নারী তা জানেন না। তাই নিজের বা পরিবারের উপর কোন অন্যায় হলে নারী মুখ বুজে সহ্য করত আগে। এখন সে দিন শেষ। আমার এলাকার নারীদের জেলা লিগ্যাল এইড অফিস পর্যন্ত নিয়ে বিনা খরচে আইনী সেবা নিশ্চিত করতে সহায়তা করি। নাসিমা বলেন, কখনো কখনো নারীদের জন্য স্থানীয় সরকারের তৃনমুল প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদ যেসব বরাদ্দ প্রদান করে তা ইউপি চেয়ারম্যানরা মঞ্জুর করেন না। এরকম নারীদের নিয়ে উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত নিয়ে প্রাপ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। এ কাজে প্রশাসনের লোকজন সাহায্য করেছেন আমাকে। নাসিমা বেগম ২০১৯ সালে অপরাজিতা প্রকল্পের সাথে দক্ষতার সাথে কাজ করছেন। যার ফলে নাসিমা জেলা অপরাজিতা নেটওয়ার্কের সদস্য ও সদর উপজেলা অপরাজিতা নেটওয়ার্কের অর্থ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ইতোমধ্যে নওগাঁ, রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থানে অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরে অংশ নেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জ্ঞাত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আর্গামীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নারী ইউপি সদস্য হিসেবে নির্বাচন করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন তিনি। নাসিমা বলেন, মানুষ চায় আমি নির্বাচন করি। আমি তাদের পাশে দাড়াই ভালোবাসা থেকে আর তারাও এই ভালোবাসার প্রতিদানে আমাকে ভোট দিতে চান। আমি দেখেছি মানুষ কেবলমাত্র সচেতনতার অভাবে জীবনে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আর তখনই আমার মনে হয়েছে একজন মানুষ হিসেবে এই পৃথিবীর কাছে আমার ঋণ শোধ করার অন্যতম উপায় হচ্ছে এই সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর সেবা করা। আমার একমাত্র শক্তি হলো মানুষের সমর্থন ও মানুষের অনুপ্রেরণা। সেজন্য মানুষের জন্যই কাজ করার প্রবল এই ইচ্ছাশক্তি, মানুষের কাজেই ব্যবহার করতে করবো।