8.9 C
New York
Friday, August 8, 2025
No menu items!
Homeশীর্ষ সংবাদ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্র্রয়ের অনুমতি অনন্য মানবিকতার প্রমাণ

১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্র্রয়ের অনুমতি অনন্য মানবিকতার প্রমাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংস হামলা চালায় সে দেশের সেনারা। গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংস করে দেয়া হয়। সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে সীমান্তে এসে আশ্রয় নেয় নির্যাতিত রোহিঙ্গারা। যদি বাংলাদেশে না ঢুকতে দেয়, যদি ফিরিয়ে দেয়- এই অনিশ্চয়তা নিয়ে কেবল দোয়া করেছি বলেন রোহিঙ্গা রাহামান। তিনি ২০১৭ তে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।

সেদিন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেয়নি বাংলাদেশ। জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিল। দেশের সীমান্ত খুলে দিয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় দেয়া হয় মিয়ানমারের নির্যাতিত এই জনগোষ্ঠীকে।

এরপরপরই ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেইদিনের তার চোখে মুখে ছিলো এক অন্যরকম মায়া। ভাষাগত দুরত্বের পরেও সেদিন শিবিরের মানুষগুলোর চোখের ভাষা বুঝতে সমস্যা হয়নি প্রধানমন্ত্রী ও মমতাময়ী শেখ হাসিনার। গত ছয় বছর ধরে তার সরকার যেভাবে লক্ষ লক্ষ নারী শিশু রোহিঙ্গাকে আগলে রেখেছেন। এদের ঘরবাড়ি মিয়ানমারের আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, এদের স্বনজদের চোখের সামনে তারা হত্যা হতে দেখেছে মিয়ানমারে।

কবে থেকে রোহিঙ্গারা আসছে
সীমান্ত দেশ হওয়ায় মিয়ানমার থেকে ১৯৪২ সাল থেকে নানা ভাগে রোহিঙ্গারা এদেশে প্রবেশ করেছে। সরকারি হিসেবে এ পর্যন্ত এরকম চারটি বড় আকারের অনুপ্রবেশ সংঘটিত হয়েছে। ১৯৭৮ সালে প্রায় ২লক্ষ, ১৯৯১-৯২ সালে আড়াই লক্ষ, ২০১৬ সালে প্রায় ৮৭ হাজার ও আগষ্ট, ২০১৭ থেকে জানুয়ারী, ২০১৮ এর মধ্যে প্রায় ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। যাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মানবিকতা বিশ্ব সমাদৃত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিকতা
১২ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে উল্লেখ করে মিয়ানমার থেকে আসা সাত লাখ রোহিঙ্গাকেও বাংলাদেশ খাওয়াতে পারবে। তিনি বলেন, ‘আমরা ১৬ কোটি মানুষকে খাবার দেই। সুতরাং বিপদে পড়ে আমাদের দেশে আসা দুই-পাঁচ-সাত লাখ মানুষকে খাবার দেওয়ার ক্ষমতাও আমাদের আছে। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের যেন কোনও কষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতেও স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় এক কোটি বাঙালির শরণার্থী হওয়ার কথা স্মরণ করেন। এই যে বাস্তুচ্যুতদের অবস্থানে নিজেকে বসানো, সরকার প্রধান হিসেবে তা অনন্য বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এবং বাংলাদেশ থেকে যেন এই রোহিঙ্গারা নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে সেই ব্যবস্থাও বিশ্বকেই করতে হবে বলে মত তাদের।

প্রশংসা করেছে আন্তর্জাতিক বিশ্ব
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় সেসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ান৷ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর বিশেষ দূত ও হলিউড তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ও সহৃদয় নেতৃত্বদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। মানবতার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় সংবাদ সংস্থা ইন্টার প্রেস সার্ভিস থেকে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতিসংঘে ছিলো শেখ হাসিনার ৫ পস্তাব
২০১৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তিনি পাঁচ দফা প্রস্তাবও করেন। তিনি তখনই বলেছিলেন অনতিবিলম্বে ও চিরতরে মিয়ানমারের সহিংসতা এবং জাতিগত নিধন নিঃশর্তে বন্ধ করা দরকার, দ্রুত মিয়ানমারে জাতিসংঘ মহাসচিবের নিজস্ব অনুসন্ধানী দল পাঠানোর মধ্য দিয়ে

জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সব নাগরিকের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে মিয়ানমারের ভেতর জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষাবলয় গড়ে তোলা, রাখাইন রাজ্য থেকে জোর করে তাড়িয়ে দেয়া সব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে তাদের নিজেদের বাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা ও কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালা নিঃশর্ত, পূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তাবায়ন নিশ্চিত করা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক লে জে (অব) আবদুর রশীদ বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশেষভাবে সমাজৃত হওয়ারই কথা। প্রধানমন্ত্রী মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এখন এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে কীভাবে প্রত্যাবসন করা যায়, সেটা এখন জরুরি।

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments