8.9 C
New York
Friday, August 8, 2025
No menu items!
Homeশীর্ষ সংবাদযুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব আর্থ-রাজনৈতিক স্বার্থে এই ভিসানীতি

যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব আর্থ-রাজনৈতিক স্বার্থে এই ভিসানীতি

প্রান্তজন ডেস্ক : নতুন এই ভিসা নীতির পিছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে নিজস্ব আর্থ-রাজনৈতিক স্বার্থ। বিশ্ব অর্থনীতিতে চিন, জাপান ও ভারতের ক্রমবর্ধমান শক্ত অবস্থান মার্কিন প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমেরিকার জাতীয় অর্থনীতির আকার দিনকে দিন কমছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো ঋণগ্রস্ত দেশে পরিণত হয়েছে।
সাম্প্রতিক ইউক্রেন যুদ্ধে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। ফলে তারা এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির দেশগুলোকে দমিয়ে রাখার কৌশল হাতে নিয়েছে। তাছাড়া ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের কাছ থেকে যে সুবিধা আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র সেই সুবিধা বাংলাদেশ দিতে প্রস্তুত নয়। কারণ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ ভারসাম্যমূলক কূটনীতির ক্ষেত্রে মার্কিন চাওয়া চরম বাধা।
গত ২৪ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন হঠাৎ করেই নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ঘোষণার প্রায় চার মাসের মাথায় ২২ সেপ্টেম্বর থেকে এই ভিসা নীতি প্রয়োগের ঘোষণা জানান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। তার বিবৃতিতে উঠে এসেছে যে ভিসা নীতির আওতায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্যরা অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন।
এই ভিসা নীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিমুখীনীতির একটি চমৎকার উদাহরণ। পাকিস্তানে নূন্যত্বম গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকা সত্ত্বেও ২০২১ ও ২০২৩ সালে আমেরিকা কর্তৃক আয়োজিত ডেমোক্রেসি সামিতে পাকিস্তান আমন্ত্রণ পায়। বাংলাদেশকে একবারও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যদিও এর সদুত্তর নেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। যেমনটা সৌদি আরবে রাজতন্ত্র থাকা সত্ত্বেও সৌদি আমেরিকার ভালো বন্ধু
স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রণীত সংরক্ষিত ভিসা নীতি বা নিষেধাজ্ঞা জারি কোনো সভ্য দেশের কাজ হতে পারে না। একটি পরাশক্তি দেশের এমন আচরণ দুঃখজনক। তাছাড়া ঘোষিত ভিসা নীতি মানবাধিকারেরও স্পষ্ট লঙ্ঘন। পৃথিবীতে মানুষের স্বাধীন চলাচল তার রাজনৈতিক মতাদর্শের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে না। বাংলাদেশ-আমেরিকা পরস্পরের সঙ্গে কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নেই। এ ধরনের ভিসা নীতি সাধারণ যুদ্ধরত দেশগুলোর মধ্যে হয়ে থাকে।
শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। ২০০০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে যে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থান ঘটেছিল, তা দমনে তাঁর সরকার নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। সন্ত্রাসদমনের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের একটি রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলেছেন।
ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের এই উত্থান মার্কিন আগ্রাসী স্বার্থে আঘাত হেনেছে বলেই, তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। কারণ তাদের কার্যক্রম থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, একটি গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের বদলে মার্কিন প্রশাসন মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দিতে চাইছে।
এটা স্পষ্টতই বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের অবৈধ হস্তক্ষেপের একটি নিকৃষ্ট নজির। কূটনৈতিকভাবেও এই নীতি অগ্রহণযোগ্য। নানা অপ-তৎপরতার পরও মার্কিন পরাশক্তি যেহেতু বাংলাদেশকে তার নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরাতে পারেনি, সেহেতু ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের’ আড়ালে তারা কার্যত বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিশ্বের দ্বি-মেরু বিভাজনকে সবসময়ই নেতৃত্ব দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ সাম্প্রতিক নানা আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বাংলাদেশ তার জোট-নিরপেক্ষ ও স্বাধীন অবস্থান বজায় রেখেছে। আধিপত্যবাদী মার্কিন প্রশাসন কোনোভাবেই এ পরিস্থিতি মেনে নিতে পারছে না।
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে আমূল বদলে যাওয়া আজকের পৃথিবীতে তথাকথিত মার্কিন কর্তৃত্ববাদের কোনো ঠাঁই নেই। এই বাস্তবতা মেনে নিতে পারছে না বাইডন প্রশাসন। বাংলাদেশের মতো একটি মধ্যম আয়ের বন্ধু রাষ্ট্রের বিষয়ে তাদের নতুন ভিসা নীতিটি একদিকে যেমন অমানবিক, তেমনি মার্কিন প্রশাসনের হঠকারিতারও উদাহরণ। এই হঠকারিতা অবশ্য নতুন নয়। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর থেকেই বাংলাদেশ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
ড. ইউনুস থেকে শুরু করে র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর তথাকথিত নিষেধাজ্ঞা জারি আর আজকের এই নয়া ভিসি নীতির প্রতিটি ক্ষেত্রেই মার্কিন প্রশাসন ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে, যা বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সুসম্পর্কের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments