8.9 C
New York
Friday, August 8, 2025
No menu items!
Homeমতামতপ্রধানমন্ত্রীর অনন্য উদ্যোগ, একশ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল বদলে দিচ্ছে দেশের অর্থনীতি / -কঙ্কা...

প্রধানমন্ত্রীর অনন্য উদ্যোগ, একশ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল বদলে দিচ্ছে দেশের অর্থনীতি / -কঙ্কা কণিষ্কা

বাংলাদেশে গত ২৫ বছরে দারিদ্র্য কমেছে ৫০ শতাংশের বেশি। ২০২০ সালের মে মাসেরএশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি তাদের এক প্রতিবেদনে দিচ্ছে এই তথ্য। এছাড়া ওই প্রতিবিদনে বলা হয়, গত দশ বছরে বাংলাদেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ছয় শতাংশের ওপরেই থাকছে। এর পরের বছরই দেশের মানুষের এমন অর্থৈনৈতিক সাফল্যে, মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশ। এই শুভক্ষণে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্য ঠিক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, এই সাফল্যের সিংহভাগ এসেছে শেখ হাসিনা সরকারের উৎপাদন এবং বিনিয়োগবান্ধব উদ্যোগের ফলে। তিনি পরিকল্পিত শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছেন। এই যাত্রা তিনি শুরু করেছিলেন ২০১০ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রতিষ্ঠা করে। এই প্রতিষ্ঠানটি সব সময়ই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল। ২০১৩ সালে শুরু হয় এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মূল কাজ। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজ শুরু করেন। শুরু থেকেই বেজার লক্ষ্য ছিল শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, উত্পাদন এবং রপ্তানী বাড়ানো। পাশাপাশি পরিকল্পিত উপায়ে দেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ।
বেজার তত্ত্বাবধানে সারাদেশে মোট ১০০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ৯৭টির জন্যেই গর্ভনিং বোর্ডের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থৈনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে চট্টগ্রামের মীরসরাই সীতাকুণ্ড এবং ফেনি মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। এর আয়তন প্রায় ৩০ হাজার একর । এটিকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম একটি শিল্পনগর ভাবা হচ্ছে। এই শিল্পনগরীর মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে। শুরু হয়েছে অবকাঠামো নির্মাণ। এই শিল্প নগরে একটি পূর্ণাঙ্গ শহরের সম্ভাব্য সব নাগরিক সুবিধা থাকবে। বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত হলে আগামী ২০ বছরে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের কাজের ব্যবস্থা হবে।
শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ হচ্ছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুরে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী এর ভিত্তি প্রস্তর বসান। শুরু থেকেই বলা হচ্ছে এখানে শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ হবে। পাশাপাশি কাজের যোগাড় হবে সিলেট বিভাগের প্রায় ৪৪ হাজার মানুষের।
জামালপুর জেলার সদর উপজেলার ৪৩৬.৯২ একর জায়গায় জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণ চলছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি ও মাস্টার প্লান শেষ হয়েছে। বিসিকসহ এ অঞ্চলে ৫২ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজারের মহেশখালীতে আরেকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কাজ চলছে।
প্রত্যেকটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি বিনিয়োগ অনুযায়ী চারটি পর্যায়ে বিনিয়োগ হবে। এগুলো হচ্ছে সরকারি পর্যায়, বেসরকারি পর্যায়, সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারী পর্যায়ে এবং বিদেশি পর্যায়ে। প্রতিটি ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা ১২ বছরের আয়কর সুবিধা পাবেন। আরো থাকছে স্থানীয় ক্রয় থেকে ভ্যাট মওকুফ, কাস্টমস শুল্ক সুবিধা, জমি রেজিস্ট্রেশন ফি ও স্ট্যাম্প ডিউটি মওকুফ এবং ডিভিডেন্টে ট্যাক্স মওকুফের সুবিধা। বিনিয়োগকারী শিল্প উদ্যোক্তারাও পাবেন ১০ বছরে আয়কর সুবিধা, কাঁচামাল আমদানীতে ডিউটি অবকাশ, যেকোন পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ সুবিধা এবং জমি রেজিস্ট্রেশন ফি ও স্ট্যাম্প ডিউটি মওকুফ। এছাড়াও লভ্যাংশ কর, রয়েলটি ও কারিগরি ফি থেকে অব্যাহতি পাবেন উদ্যোক্তারা
অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানা স্থাপন করছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো। বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসা ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে চীনের ৯টি, যুক্তরাজ্যের ৫টি, ভারতের ৪টি, অস্ট্রেলিয়ার ৪টি, জার্মানির ২টি, যুক্তরাষ্ট্রের ২টি, জাপানের ২টি, নেদারল্যান্ডসের ২টি, সিঙ্গাপুরের ২টি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের একটি করে প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখন পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব রয়েছে ৩০৯ কোটি ৪৩ লাখ ডলার এবং দেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব রয়েছে দুই হাজার ৫১৮ কোটি ১৭ লাখ ডলারের।
বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে বিদেশিদের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ অঞ্চল। চীন ও জাপানের বিনিয়োগ বাড়াতে নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে নির্মাণ হচ্ছে দুটি অঞ্চল। ভারতের জন্য থাকছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের একটি অংশ ও মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল। সৌদি আরব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে একটি অঞ্চল করার প্রস্তাব দিয়েছে।
অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে কিছু প্রতিষ্ঠান উৎপাদনমুখী কার্যক্রম শুরু করেছে। বিশ্ব মহামারী করোনার সংক্রমনের সময়েও এখানে বিনিয়োগ হয় ৬ মিলিয়ন ডলার। এমনকি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার যে আশঙ্কা ছিল সেটিও সত্য হয়নি।
বিনিয়োগকারীদের নিরবিচ্ছিন্ন সহায়তা দেয়ার জন্যে জাইকার কারিগরি সহায়তায় একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু হয়েছে। ওয়ান স্টপ সার্ভিসের আওতায় বিনিয়োগকারীদের ১২৫ ধরণের সেবা দেয়া হচ্ছে। যার মধ্যে ১৭ টি সেবা অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে অনলাইনে সেবা আরো বাড়ানো হচ্ছে।
এছাড়াও অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের আওতায় কক্সবাজারে তিনটি ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে । এগুলো হচ্ছে সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক । সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্কটি হবে মহেশখালীর চর মকবুল, চর ভরাট ও সমুদ্র বিলাস এলাকায়। এটি হবে বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পিত ট্যুরিজম পার্ক। টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদীর পাড়ে মনোরম জালিয়া দ্বীপে প্রতিষ্ঠা হবে এই পার্ক। সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে টেকনাফ উপজেলার সাগর তীরে।
এসব পার্কে পাঁচতারকা হোটেল, ইকো-ট্যুরিজম, মেরিন অ্যাকুয়ারিয়াম, সি-ক্রুজ, ভাসমান জেটি, শিশু পার্ক, পানির তলদেশে রেস্টুরেন্ট, ভাসমান রেস্টুরেন্ট, ঝুলন্ত সেতুসহ বিনোদনের নানা বিষয় যুক্ত করার পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে পার্কগুলোতে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সারাদেশে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো প্রতিষ্ঠা হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বিভিন্ন অঞ্চলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪১ হাজার লোকের কাজের ব্যবস্থা হয়েছে।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments