8.9 C
New York
Friday, August 8, 2025
No menu items!
Homeজাতীয়ঢাকার দেওয়ালে নতুন গ্রাফিতি: বাংলাদেশের মানচিত্র পাকিস্তানকে উপহার দিতে চায় কারা?

ঢাকার দেওয়ালে নতুন গ্রাফিতি: বাংলাদেশের মানচিত্র পাকিস্তানকে উপহার দিতে চায় কারা?

বিশেষ প্রতিনিধি: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা অর্জন করলেও স্বাধীনতাবিরোধীদের কাছ থেকে মুক্তির জন্য যুদ্ধ চলছে আজও। বাংলাদেশ যতবার উন্নয়নের শিখরে পৌঁছাতে ধারাবাহিক পথ পাড়ি দিচ্ছে, বিশ্ব দরবারে সকলের সামনে মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে ঠিক ততবার তার ওপর আঘাত করা হয়েছে। একসময়ের প্রধান বিরোধী দল যখন তাদের আন্দোলনের প্রধান স্লোগান ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ নির্ধারণ করে তখন আবারও প্রশ্ন উত্থাপিত হয়- এরা কারা, যারা পাকিস্তানকে বাংলাদেশের মানচিত্র উপহার দিতে চায়?
মুক্তিযুদ্ধ গবেষকরা বলছেন, এটা খুবই স্পষ্ট যে কারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকান্ডে আজও যুক্ত এবং কারা বিভিন্ন সময়ে বক্তব্য রেখেছে যে, পাকিস্তানের কাছে ফিরে যেতে চায়। এখন দরকার এই টেক ব্যাক বাংলাদেশবিরোধী একটা অবস্থান নেওয়া এবং এদের প্রতিরোধ করা। আমাদের শক্তি হলো, যখনই বাংলাদেশের ওপর কোনো আঘাত এসেছে তখনই আমাদের তরুণ প্রজন্ম তা রুখে দিতে সক্ষম হয়েছে। এবারও পারবে।
আর এই প্রতিরোধের অংশ হিসেবে তরুণ প্রজন্ম মাঠে কাজ করছে নানাভাবে। এবার তারা টেক ব্যাক বাংলাদেশকে সমালোচনা করে ঢাকার রাস্তায় নতুন গ্রাফিতি নিয়ে হাজির হয়েছে।
বাংলাদেশকে পিছনের দিকে টানছে বিএনপি নেতারা- জোরসে বলো হেইয়ো, টেকব্যাক বাংলাদেশ, পিছিয়ে দাও বাংলাদেশ। ঢাকার বিভিন্ন দেয়ালে শোভা পাচ্ছে আরও অনেক গ্রাফিতি। যার একটিতে দেখা যায় পাকিস্তানের পতাকা আকৃতির এক ডাইনোসরকে বাংলাদেশের মানচিত্র খেতে উদ্বুদ্ধ করছে তারেক জিয়ার আদলের এক ব্যক্তি। আর লেখা আছে টেক ব্যাক বাংলাদেশ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তারেক জিয়া বাংলাদেশকে শিকল দিয়ে টেনে পিছনে নিতে চেষ্টা করছেন ‘টেক ব্যাক বাংরাদেশ’ স্লোগান দিয়ে।
ইতিহাস বলছে, একমাত্র জার্মানির নাৎসি পার্টি ছাড়া বিশ্বের কোন রাজনৈতিক দল, তার দেশকে পিছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেনি। ১৯২০ সালে উগ্র জাতীয়তাবাদী চেতনা নিয়ে হিটলারের নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটে। তখন তারাও স্লোগান দিয়েছিল ‘টেক ব্যাক জার্মানি।’ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে কমিউনিস্ট উত্থান ঠেকাতে কট্টর জাতীয়তাবাদের বিষবাম্প ছড়িয়ে দিয়েছিল নাৎসিরা।
বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করলো। কিছুদিন ধরে বিএনপি ‘এক দফা’ আন্দোলনে ব্যস্ত। একদিকে বিএনপি একদফা ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক গুচ্ছ দাবি দাওয়া উত্থাপন করেছে। এসব দাবির কোনটা আসল আর কোনটা নকল সেই ভাবনার মধ্যে গুরুতর অভিযোগ তাদের স্লোগানকে ঘিরে। ঠিক কোন পরিস্থিতিতে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ বলতে পারে একটি রাজনৈতিক দল।
‘টেক ব্যাক জার্মানির’ পরিণাম কি হয়েছিল আমরা সবাই জানি। ঠিক একশো বছর পর হিটলারের স্লোগান ফিরে এসেছে বাংলাদেশে, বিএনপির হাত ধরে। অবশ্য নাৎসি পার্টির পুরো নামের সঙ্গে বিএনপির পুরো নামের মিল আছে। হিটলারের দলের পুরো নাম ‘ন্যাশনাল সোশালিস্ট জার্মান ওয়ার্কাস পার্টি।’ রাজনৈতিক দল বা নেতারা জনগণকে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখান, আগামীর পরিকল্পনার কথা বলেন। বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে স্লোগান দিয়েছিলেন ‘চেঞ্জ’ পরিবর্তনের ডাক দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। নেলসন ম্যান্ডেলা মুক্তি পেয়ে বলেছিলেন ‘লুক ফরোয়ার্ড।’ বিএনপি বলছে ‘টেক ব্যাক।’ বাংলাদেশকে টেনে হিঁচড়ে বিএনপি কোথায় নিয়ে যেতে চায়? কোন আমলে?
সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, – ‘পাকিস্তান আমল ভালো ছিলো।’ বিএনপি কি তাহলে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানাতে চান? ৭৫ এর নারকীয় ঘটনার আসল উদ্দেশ্য ছিলো বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানে ফেরানো। সামরিক এক নায়ক জিয়াউর রহমান ছিলেন তার স্বপ্নদ্রষ্টা। ৭ নভেম্বর ক্ষমতা দখল করে তিনি পাকিস্তান অভিমুখে নিয়ে যেতে থাকেন বাংলাদেশকে। ‘জয় বাংলা’ হয়ে যায় ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’ ‘বাংলাদেশ বেতার’ হয় ‘রেডিও বাংলাদেশ’। সেটা ছিলো প্রথম ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ উদ্যোগ।
এই টেক ব্যাক বাংলাদেশ বলার সাহস কীভাবে হয় উল্লেখ করে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, এই ঘাতক গোষ্ঠী বারবারই বাংলাদেশকে পাকিস্তানে ফিরিয়ে নিতে ষড়যন্ত্র করেছে। তারেক জিয়ার পাকিস্তান প্রেম নতুন কিছু না। কয়দিন আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বললেন, পাকিস্তান আমলে ভালো ছিলাম। জামায়াত ইসলামী ও বিএনপি একই মায়ের পেটে সহোদর বারবার ঘোষণা দিয়েছে। এগুলো নতুন না তাদের জন্য। তারেক জিয়ার বরাবরের উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে হবে। আর এর বিপরীতে বাংলাদেশের তরুণরা বারবার রাস্তায় নেমেছে। এবারেও এই বিষয়টি নানাভাবে তুলে ধরা উচিত। টেকব্যাক বাংলাদেশ যে ঘটতে দেওয়া যাবে না তরুণদের এই সচেতনতার জন্য তাদের অভিনন্দন। এটা মূলধারার গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments