সিংড়া প্রতিনিধি: পরিশ্রম করলে সফল হওয়া যায়। তারই উদাহরণ কানন। জীবন সংগ্রামই নারীদের কখনো কখনো প্রেরণা দিয়ে থাকে। সংগ্রামী নারীদের গল্প আমরা অনেকেই জানি, এদের মাঝে জান্নাতুন কানন একজন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নাটোরের সিংড়া উপজেলার চাঁদপুর মহল্লার বাসিন্দা কানন। ২০২০ সালে সংসার জীবন শুরু করেন। নতুন সংসার জীবনে হানা দেয় করোনার থাবা। বন্ধ হয়ে যায় স্বামীর চলমান ব্যবসা। তখন সে সময় ওম্যান এন্ড ই কমার্স ট্রাস্ট (বি) অনুপ্রেরণা যোগায় কাননকে। অসচ্ছল সংসারের হাল ধরেন তিনি নিজেই। যাত্রা শুরু হয় “কানন অর্গানিক ফুডস্” এর। ফেসবুক পেইজের নাম দেন নিজ নামে- কানন অর্গানিক ফুডস সে সময় অনলাইন ও অফলাইন ব্যবসা শুরু করেন কানন। বাড়ি বাড়ি গুনগত মানের পণ্য পৌঁছে দেয়া, ব্যবসা, সংসার আর পড়ালেখা কোনটাই যেনো থেমে নাই। প্রথমে কাঠের ঘানীর সরিষার তেল, ঘি ও প্রকৃতিক চাকের মধু দিয়ে শুরু করলেও এখন হরেক রকম পণ্যের সমাহার তার উদ্যোগে যোগ হয়েছে। পণ্যের মান অনেক ভালো জন্য ক্রেতাদের আগ্রহ ও বেশি। পরিশ্রম, নিষ্ঠা,সততা আর মেধাকে পুঁজি করে পা বাড়ান অনলাইন ব্যাবসায়। এই এগিয়ে চলাই আজ তাকে একজন অদম্য নারী উদ্যোক্তা হিসেবে দাড় করিয়েছে। শত প্রতিকূলতার মাঝে মানসিকভাবে ভেঙ্গে না পরে উদ্যোক্তা হওয়ার বাসনা তাকে প্রবল ভাবে নাড়া দেয়৷ এরই মাঝে কোল জুড়ে লক্ষী পুত্র সন্তানের জন্ম দেন তিনি। জীবন যুদ্ধটা যেনো তার জন্য আরও কঠিন হয়ে পরে৷ কিন্তুু তার মনের অদম্য বাসনা কিছুই যেনো তাকে দমাতে পারেনি। উদ্যোক্তা জীবনের সহযোদ্ধা হিসেবে যোগ দেন তার স্বামী।
নাটোরের সিংড়ায় একজন সফল উদ্যোক্তা চলন বিলের মেয়ে জান্নাতুন কানন। সকল ধরনের অর্গানিক ফুড নিয়ে কাজ করছেন। কানন অর্গানিক ফুডস পণ্যসমূহঃ কাঠের ঘানির সরিষার তেল, কালোজিরার তেল, গাওয়া ঘি, প্রাকৃতিক চাকের মধু,কালোজিরা ফুলের মধু, মিক্সড ড্রাই ফ্রুটস, মধুময় বাদাম, সিজনাল খেজুর ও আখের চিনিমুক্ত পাটালী গুড়, রসুনের আচারআমের আচাড়, চিয়াসিড, জবের ছাতু, বুটের ছাতু, বাসমতি রাইস, লাল চাল, গমের লাল আটা, মরিচের গুড়া, হলুদের গুড়া, ধনিয়া গুড়া, জিড়া গুড়া ও সজনে পাতার গুড়া সহ বিবিধ ধরনের অর্গানিক ফুডস্। কানন বলেন, সবসময় আমার পাশে থেকে উৎসাহ যুগিয়েছেন আমার স্বামী। প্রত্যকটি কাজে তার সহযোগিতা পেয়েছি। কোলে শিশু সন্তান থাকায় বিভিন্ন সরকারী ট্রেনিং গুলোতে তিনি তার স্বামীকে পাঠিয়েছেন ৷ যার দরূন আজ তার স্বামীও একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এ কারণে চাহিদা মত পণ্য সময়মতো কাষ্টমারের কাছে পৌছে দিতে আমরা সক্ষম হয়েছি। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বছরে ১০/১২ লক্ষ টাকার বিজনেস হচ্ছে তার। দেশের অনেক স্বনাম ধন্য প্রতিষ্ঠান “কানন অর্গানিক ফুডস্” এর পণ্য এখন তাদের বাসায় এসে পাইকারী নিচ্ছেন। সরাসরি, কুরিয়ারে অর্ডার পৌছে দেয়া হচ্ছে। ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে পেরে আমরা ধন্য। এ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে বলেন, কিভাবে শুরু করবো? সফলতা আসবে কিনা এসব না ভেবে উদ্যম নিয়ে শুরু করি। পিছনে ফিরে তাকায়নি। মেধা, পরিশ্রম আর সততা ব্যবসার মূলধন আমাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
কানন বলেন, একজন ক্ষুদ্র উদ্দ্যোক্তা হিসেবে বর্তমানে তিনি তার পন্য সমূহ বাজারজাত করণের স্বপ্ন দেখছেন। ভেজালের রাজ্যে খাঁটি মানের নিশ্চয়তা নিয়ে তার অর্গানিক খাবার পণ্য সমূহ বাজারজাতকরণ করতে সরকারী সহযোগী চাচ্ছেন। তিনি আরও জানান- আমাদের আইসিটি প্রতিমন্ত্রী “জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক স্যারের অবদানে , আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫ তম শুভ জন্মদিনে ” বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে” অনুষ্ঠিত “স্মাট নারী উদ্যোক্তা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠান” এ সারা বাংলাদেশ থেকে ১০০০ জন নারী উদ্দোক্তাদের মাঝে ৫০,০০০ টাকা করে অনুদান প্রদান করা হয়। আমি সিংড়া উপজেলার নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সরকারী অনুদানের আইসিটি গ্র্যান্ট চেক পেয়ে গর্বিত। উক্ত সরকারি অর্থ আমার ব্যাবসায় সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিনিয়োগ করি। আমাদের আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ” জুনাইদ আহমেদ পলক স্যারের কাছে আরেকটি বিনীত আবেদন করতে চাই, পলক স্যার যদি আমাদের নারী উদ্দোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য সরকারী হস্তক্ষেপ ও সহযোগীতায় বানিজ্যিক লাইসেন্স সমূহ গুলোর ব্যবস্থা করে দেন। তাহলে সারা বাংলাদেশ সহ বিদেশের মাটিতেও আমরা আমাদের দেশের পণ্য সমূহ তুলে ধরতে পারবো এবং গড়তে পারবো নিজেদের পরিচয় যে “আমরা নারী -আমরাই পারি”!!!