গোলাম রাব্বানী, স্টাফ রিপোর্টার
নেট পলি হাউস আধুনিক কৃষির অনন্য সংযোজন। দেশের কৃষি খাত সংশ্লিষ্টরা এই পদ্ধতির সাথে অতি সম্প্রতি পরিচিত হলেও ইউরোপ সহ বিশ্বের উন্নত দেশের কৃষিতে এর ব্যবহার ছিল অনেক আগে থেকেই।
নেট পলি হাউস কি?
নেট পলি হাউস হচ্ছে এক ধরনের পলিথিন শিটের ছাউনি দেওয়া ঘরের মতো। যার মাধ্যমে উদ্ভিদের শরীরে কোনওভাবেই সরাসরি সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রে বা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি লাগবে না।
এবার দেশের মাটিতে ফসল উৎপাদন হবে নেট পলি হাউস পদ্ধতিতে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে উদ্যমী এক কৃষকের সহযোগিতায় রাজশাহীর পুঠিয়ায় আধুনিক পদ্ধতিতে একটি নেট পলি হাউজ গড়ে উঠেছে। যেখানে ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কিছু ফসলের চাষও করতে দেখা গিয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নেট পলি হাউজ প্রাপ্ত পুঠিয়ার বানেশ্বর এলাকার কৃষক আজিজুল বলেন, “আমরা এতদিন সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে আসছি যেখানে বছরের ৩-৪ টি ফসলের চাষ করতাম। কিন্তু আধুনিক এই পদ্ধতিতে কমপক্ষে ৬ রকমের শাক-সবজির চাষ করতে পারবো। ফলে সারাবছরই এখান থেকে ভালো পরিমাণে টাকা আয় করতে পারবো বলে আশা করি।”
নতুন এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে, সে সকল সমস্যার সমাধানে সার্বক্ষণিক কৃষি কর্মকর্তাদের পাশে পাচ্ছেন বলে জানান এই কৃষক।
পুঠিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুন্নাহার ভূঁইয়া জানান, “কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই প্রজেক্টটি সঠিক জায়গায় স্থাপন ও উদ্যমী কৃষক নির্বাচনের দায়িত্ব ছিল আমাদের। তিনি বলেন, নেট পলি হাউজের মধ্যে অসময়ে বিভিন্ন শাক, সবজি , ফুল চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। আমরা তাকে উন্নত জাতের বিভিন্ন বীজ সরবরাহ করছি এবং সার্বক্ষণিক এই প্রজেক্টের খবরাখবর রাখছি।”
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন জানান, রাজশাহীতে (পবা, পুঠিয়া ও বাঘা) ৩টি উপজেলায় পলি নেট হাউস স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে গ্রীষ্মকালীন টমেটো, স্ট্রবেরি, বিদেশি ফুল সহ উচ্চ মূল্য ফসল চাষ করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে।
নেট পলি হাউস যেহেতু পলি দ্বারা বেষ্টিত থাকবে সেহেতু চাষকৃত জমিতে মৌমাছি, পোকামাকড় কিছুই ঢুকতে পারবে না। তাহলে ফসলের পরাগায়ন কিভাবে হবে? প্রশ্নোত্তরে এ কর্মকর্তা জানান, পলি নেট হাউজ পদ্ধতিতে ফসলের পরাগায়ন ম্যানুয়ালি হাত দিয়ে করাতে হবে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পলি-হাউজ পদ্ধতিতে চারদিকে প্লাস্টিকের ছাউনি থাকায় সূর্যের তাপ সরাসরি খেতে ঢুকতে পারে না। ফলে, শীতের সব্জি গরমেও চাষ করতে অসুবিধা হয় না। এই পদ্ধতিতে পানির অপচয় ঠেকানো যায়। সার দেওয়া হয় নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে। প্লাস্টিকের চাদর থাকায় দুর্যোগের প্রকোপও অনেকটা ঠেকানো সম্ভব হয়। সব মিলিয়ে পলি-হাউস পদ্ধতিতে ফসলের অন্তত ২০ শতাংশ ফলনও বেশি হয় বলে দাবি কৃষি বিশেষজ্ঞদের।