বাগাতিপাড়া প্রতিনিধি: নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার মুরাদপুর পাঁচুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ছুটির দিনে স্কুলের আবদ্ধ এক কক্ষ থেকে শিক্ষক ও স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করা নিয়ে এলাকায় চলছে তোলপাড়। তবে বিষয়টি কি ছিল তা তদন্ত না করে স্কুল শিক্ষক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মিলে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চলছে চেষ্টা। প্রধান শিক্ষকের দাবী স্থানীয় যুবকরা এই ঘটনার জন্ম দিয়েছে তারা ছিল বখাটে আর যুবকদের দাবী সত্য ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে শিক্ষকরা যুবকদের বানাচ্ছে বখাটে ও ইভটিজার। এদিকে এঘটনার সত্যতা জানতে গিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দেন অভিযুক্ত শিক্ষক মিজানুর রহমান মানিক।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৯ আগস্ট মঙ্গলবার পবিত্র আশুরার দিন হওয়ায় ছিল সরকারি ছুটি। সেই ছুটির দিনে মুরাদপুর পাঁচুড়িয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক মিজানুর রহমান মানিক একই স্কুলের ৯-১০জন শিক্ষার্থীদের সকাল ৯টার দিকে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করে সাড়ে ১১ টার দিকে প্রাইভেট পড়ানো শেষ করেন। এরপর সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষক মিজান স্কুল থেকে বের হয়ে আসেন। এর কিছুক্ষন পর প্রাইভেট পড়তে আসা ওই ছাত্রীদের একজন পুনরায় বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। তারও কিছুক্ষন পরে শিক্ষক মিজানও স্কুলে প্রবেশ করে। এক দিকে সরকারি ছুটির দিন এবং প্রাইভেট পড়ানো শেষে শিক্ষক ও ছাত্রীর স্কুলে পুনরায় প্রবেশ করার বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। সন্দেহ হবার কারন সম্পর্কে আরও জানা যায়, শিক্ষক মিজানের মোটর সাইকেলে ওই ছাত্রীকে নিয়ে একাধিকবার বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে দেখেছেন স্থানীয়রা। বেশ কিছুক্ষন পরে স্থানীয় কয়েকজন যুবক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে শিক্ষক ও ছাত্রীর অবস্থান জানার চেষ্টা করে। এর এক পর্যায়ে তারা স্কুলের ল্যাব কক্ষের দরজা ভিতর থেকে ছিটকানি লাগানো অবস্থায় পায়। ওই কক্ষে শিক্ষক ও ছাত্রীর অবস্থান নিশ্চিত হতে বাহির থেকে শিক্ষককে ডাকাডাকি করে এবং দরজা ধাক্কিয়ে কোন সাড়া না পেয়ে স্থানীয় স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক শাহ হান্নানকে ফোনে ডাকেন যুবকরা । শিক্ষক হান্নান এসে শিক্ষক মিজানকে ডাকলে তিনি দরজা খুলে দেন। কক্ষে শিক্ষক মিজানকে পাওয়া গেলেও ছাত্রীকে কক্ষে না পাওয়ায় যুবকদের উপর চড়াও হয়ে ধমক দেন শিক্ষক হান্নান। এর পরে ল্যাব কক্ষের এটাষ্ট বাথরুম ভিতর থেকে বন্ধ থাকায় স্থানীয় যুবকেরা বাথরুমে কে আছে জানতে চাওয়ায় কিছুক্ষন পর ছাত্রী বের হয়ে আসে বাথরুম থেকে। বিদ্যালয়ে কক্ষের দরজা বন্ধ অবস্থায় শিক্ষক ও ছাত্রীকে পাওয়া গেছে এমন খবর মুঠোফোনে জানতে পেরে ঘটনাস্থলে স্থানীয় কাউন্সিলর মহসিন এসে বিশৃঙ্খলা এড়াতে যুবকদের সরিয়ে নেন। এই ঘটনার মোবাইলে ধারন করা ভিডিও মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মাঝে। শুরু হয় জ্বল্পনা কল্পনা। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় বখাঠে রাজু বেশ কিছুদিন থেকে ওই ছাত্রীকে উত্যক্ত করে আসছিল। বিষয়টি তার পরিবারকে অবগত করা হয়। তার প্রেক্ষিতে পরিকল্পিতভাবে রাজু ও তার কিছু সহযোগী স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রীর এমন ঘৃন্য ঘটনার জন্ম দেয়। বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলর ও শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তবে ঘটনার সঠিক তদন্ত না করে কি বিষয় নিষ্পত্তি করা হয়েছে তা সুনিদিষ্ট করে কিছুই বলতে চাননি প্রধান শিক্ষক।
এবিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর মহসিন বলেন মুঠোফোনে জানতে পেরে ঘটনাস্থলে এসে বিশৃঙ্খলা এড়াতে যুবকদের সরিয়ে নেন। এছাড়া তিনি দাবী করেন ওই যুবকরা মোটেও বখাটে না তারা বিভিন্ন কলেজে পড়াশোনা করে। তিনি আরও বলেন ঘটনার বিষয়ে শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক বা নিষ্পত্তির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
অভিযুক্ত শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, প্রাইভেট পড়ানো শেষে শিক্ষার্থীদের ছুটি দেয়ে তিনি চা খাওয়ার জন্য স্কুল সংলগ্ন বাজারে যান। চা খেয়ে এসে তার প্রাইভেট পড়ানো নির্দিষ্ট অষ্টম শ্রেণীর কক্ষ তালাবদ্ধ করে পরীক্ষার কিছু খাতা দেখার জন্য ঐ স্কুলের ল্যাব কক্ষে প্রবেশ করেন এবং মনোযোগ সহকারে খাতা দেখছিলেন। এমতাবস্থায় বাহির থেকে ঝড়ো আবহাওয়ার জন্য পরীক্ষার খাতাগুলো উড়ে যাচ্ছিল। যার কারণে তিনি দরজাটি হালকা করে চেয়ার দ্বারা আটকিয়ে দেন। এর কিছুক্ষন পর স্থানীয় বখাটে কিছু ছেলে এসে বাহির থেকে দরজাটি আটকিয়ে দিয়ে চেচামেচি শুরু করে। এর কিছুক্ষন পর শিক্ষক হান্নানসহ স্থানীয় যুবকরা কক্ষে প্রবেশ করে এবং বাথরুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। পরে দরজা খুলে ছাত্রীকে বের করে আনে। তবে ওই ছাত্রীর বাথরুমে অবস্থানের বিষয়ে কিছুই জানতেন না বলে দাবী করেন তিনি। এছাড়াও শিক্ষক মিজান কক্ষের দরজা বাহির থেকে লাগানোর দাবী করলেও যুবকদের ওই মুহুর্তে ধারণ করা ভিডিওতে কক্ষের দরজা ভিতর থেকে লাগানো ছিল এমনটি অনুমান করা যায় এবং যুবকেরা দরজাতে সজোরে আঘাত করলেও কক্ষের ভিতর থেকে দরজা খোলা হচ্ছিল না।
এবিষয়ে যুবক রাজু জানান তার বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের আনা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। শিক্ষক ও ছাত্রীর মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তার বিরুদ্ধে দোষ চাপানো হচ্ছে। ঘটনার সঠিক তদন্ত করা হলে কে মিথ্যা বলছে তার প্রমান হবে এবং সেই সাথে সকলের কাছে ন্যয় বিচার দাবী করেন তিনি।
স্কুলের ছাত্রীর মা মুঠোফোনে জানান, তার মেয়ে প্রাইভেট পড়া শেষে টয়লেট ব্যবহার করতে যান। ওই একই রুমে শিক্ষক মিজান পরীক্ষার খাতা দেখার জন্য কিছুক্ষন পরেই প্রবেশ করেন। কিছু বখাটে স্থানীয় যুবক শত্রুতামূলকভাবে তৎক্ষনাত স্কুলে প্রবেশ করে কক্ষের দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির করে।
বিদ্যালয় পরিচালনার এ্যাডহক কমিটির সভাপতি আঃ সাত্তার জানান, বিষয়টি তিনি জানার পরে স্কুলের শিক্ষক এবং স্থানীয় কাউন্সিলরকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেন। বিষয়টি নিয়ে সমাধান হয়েছিল এমনটি তিনি জানতেন। তার পরেও বিষয়টি নিয়ে তিনি স্কুলে গিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবেন।
এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আহাদ আলী জানান, বিষয়টি তিনি জানতেন না বা কেউ তাকে লিখিত অভিযোগ দেননি। তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।