সিংড়া প্রতিনিধি: নাটোরের সিংড়ার চামারী ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে আটক অফিস সহকারী আব্দুল খালেক এর বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীর শাশুড়ী একই কলেজের অপর অফিস সহকারী আসমা খাতুনের পরকীয়া রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এই ঘটনায় কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এদিকে অভিযুক্ত পুলিশের কাছে আটক অফিস সহকারী আব্দুল খালেক ও শ্লীলতাহানির অভিযোগকারী ছাত্রীর শাশুড়ী অপর অফিস সহকারী আসমা খাতুনকে প্রাথমিক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তের বিষয়টি মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চামারী ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি এম.এম সামিরুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (১১আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টায় চামারী ডিগ্রি কলেজে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই কম আর পাঠদানও বন্ধ রয়েছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ মিনারে বসে আড্ডা দিচ্ছে। কেউ আবার শ্রেণি কক্ষে মোবাইল লুডুতে ব্যস্ত সময় পার করছে। এসময় প্রতিষ্ঠানে গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে তড়িঘড়ি করে একটি ক্লাসে ছুটে আসেন কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক নাজমুল হক। সেখানে একজন মাত্র ছাত্রীকে নিয়ে ক্লাস শুরু করার চেষ্টা করেন। তখন ক্লাসে একজন ছাত্রী কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক নাজমুল হক এই প্রতিবেদককে বলেন, কলেজে গতকালের একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনার কারণে শিক্ষার্থী কম এসেছে। পাশেই অফিস সহকারীর রুম চোখে পড়ে। ছোট একটি রুমের মাঝে তালাই দিয়ে বেড়া দিয়ে একপাশে অফিস সহকারী অপর পাশে লাইব্রেরীর রুম তৈরি করা হয়েছে। সেখানে একই টেবিলের পাশাপাশি চেয়ারে বসেন দুই অফিস সহকারী আব্দুল খালেক ও আসমা খাতুন। যেই কক্ষে বুধবার (১০ আগস্ট) বেলা ১১টায় অফিস সহকারী আব্দুল খালেক এর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে চিৎকার চেচামেচি শুরু করেন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী হোসনে আরা মিতু। পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করা হলে অফিস সহকারী আব্দুল খালেককে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। কিন্তু ওই কক্ষে ছাত্রী হোসনে আরা মিতুর শাশুড়ী অপর অফিস সহকারী আসমা খাতুনের উপস্থিতিতে কিভাবে তার শ্লীলতাহানি করা হলো বা এখানে অন্য কোন ঘটনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে কোন শিক্ষক ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি।
তবে ওই কলেজের অফিস সহায়ক নজরুল ইসলাম অকপটে বলেল, অফিস সহকারী আব্দুল খালেক এর সাথে অপর অফিস সহকারী আসমা খাতুনের দীর্ঘ দিন ধরে পরকীয়া চলে আসছে। আর এই ঘটনা নিয়ে তার পরিবারে স্বামীর সাথে মনোমালিন্য চলছে এবং অপর অফিস সহকারী আসমা খাতুন এখন তার পুত্রবধূকেও (ছাত্রী হোসনে আরা মিতু) বিপদের পথে ঠেলে দিচ্ছে। আর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থীরাও দুই অফিস সহকারীর মধ্যে পরকীরা রয়েছে বলে শুনেছেন বলে জানান তারা। কলেজের সহকারী লাইব্রেরিয়ান হাসানুজ্জামান বলেন, গতকাল তার পাশের রুমে ছাত্রীর সাথে কি ঘটেছিল দেখেননি। তবে ঘটনার সময় দুইজন অফিস সহকারী সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি গিয়ে শুনেছেন। আর একজন অফিস সহকারী তো ওই ছাত্রীর শাশুড়ী। পাশেই কমনরুমের দরজায় বসে থাকা আয়া হাজেরা খাতুন (৫৫) বলেন, যা ঘটেছে ওই ছাত্রীর শাশুড়ী অফিস সহকারীর সামনেই ঘটেছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন শিক্ষক এই ঘটনাকে মিথ্যা-সাজানো ও ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে বলেন, এতে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি ছাড়া অন্য কিছু আশা করা যায় না। এবিষয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগকারী ছাত্রীর শাশুড়ী অফিস সহকারী আসমা খাতুন বলেন, ঘটনার সময় তার সামনে একই টেবিলে তার বউ মা (ছাত্রী) অফিস সহকারী আব্দুল খালেক এর সামনে বসে ছিল। হঠাৎ সে চিৎকার শুরু করে দেয়। আমি বার বার বউ মা কে বলছিলাম কি হয়েছে? আমি তো কিছুই দেখতে পেলাম না তুমি চিৎকার করছো কেন?
আর অভিযুক্ত আটক অপর অফিস সহকারী আব্দুল খালেক বলেল, ২৭ বছর চাকুরী জীবনে এই প্রথম সে ষড়যন্ত্রের শিকার বলে জানান। টেবিলে নিচে শুধু পায়ের আঙুলের সাথে ওই ছাত্রীর পা ঠেকেছে। আমি সাথেসাথে মাফও চেয়েছি।
এবিষয়ে চামারী ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বডির বিদ্যুৎসাহী সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেন, এই বিষয়টিকে ঠান্ডা করতে আপাতত দুইজন অফিস সহকারীকে প্রতিষ্ঠানে আসতে নিষেধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে অফিস সহকারী আসমা খাতুনের বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু সে অভিযুক্ত অফিস সহকারী আব্দুল খালেক এর পক্ষে কথা বলেছে তাই এই সিন্ধান্ত। তবে তাদের মধ্যে কোন পরকীয়া আছে কিনা তা আমার জানা নেই। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুছাদ্দিকুর রহমান বলেন, তিনি শুনেছেন ঘটনার সময় ওই কক্ষে দুইজন অফিস সহকারীই উপস্থিত ছিলেন। সেখানে কি ঘটেছিল আর দুইজন অফিস সহকারীর মধ্যে পরকীয়া আছে কিনা আমি কিছুই বলতে পারব না। আজই হজ্জ পালন শেষে কলেজের অধ্যক্ষ কলেজে এসেছেন। তিনিই এখন বলবেন। তবে কলেজের অধ্যক্ষ একেএম আসাদ উজ জামান গনমাধ্যম কর্মীদের সাথে এখন কোন কথা বলবেন না বলে জানান।
এবিষয়ে সিংড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত রফিকুল ইসলাম বলেন, বুধবার ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে অফিস সহকারী আব্দুল খালেক কে আটক করে থানায় আনা হয়। পরে রাতে ওই ছাত্রীর বাবা হোসেন খান বাদী হয়ে থানায় এজাহার জমা দেন। আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চামারী ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি এম.এম সামিরুল ইসলাম বলেন, আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর প্রাথমিক ভাবে দুইজন অফিস সহকারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে তিনি ওই মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন না বলে জানান।
উল্লেখ্য বুধবার (১০ আগস্ট) বেলা ১১টায় অফিস সহকারী আব্দুল খালেক এর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে চিৎকার চেচামেচি শুরু করেন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী হোসনে আরা মিতু। পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোনে পুলিশ তাকে আটক করে।






