অতঃপর সিঁড়ি বেয়ে, বয়ে যায় রক্তগঙ্গা!
আসাদজামান
অগণন কবি দিকে দিকে, নীরবে বসে বসে
রক্তের মহাকাব্য লিখে।
শোক যেন শোক নয়! শোক, অস্থি ও মজ্জাতে
শোক থাকে ঘৃণায়, শোক চিরলজ্জাতে।
সবারই শোক আছে, শোক নেই বজ্জাতে!
আগস্ট মানেই যেন শোক শোক আয়োজন
চুপসে যাওয়া প্রকৃতি, ঝরা পাতার মত নিস্তেজ মন।
আমরা বারুদ বুঝিনি! গোলাভরা ধানে! আমাদের মুখশ্রীতে সুখময় ভাব আনে। সেদিন আঁতুড় ঘরে কান্নার মত চিৎকারে বিদীর্ণ হয়নি বোধের সুইস ব্যাংক। উৎসবে মেতে ওঠে রাতের ট্রেনের যাত্রীরা। ওরা শুধু যাত্রা শুরুর স্টেশনের নামটা জানতো। কোথায় নামতে হবে, গন্তব্য কি? ফিসফিস করে কেউ একজন বলে দিয়েছিল ওদের। তারপর সেই শোকবাহী ট্রেনটি আর কোথাও থামেনি। চলছে তো চলছেই…
মাটি থেকে আকাশ, পাহাড়, বনভূমি, নদীর স্রোত, সাগরের বিশাল জলরাশি, কে কাঁদেনি সেদিন?
উল্লসিত হাসির কাছে কান্নারা ম্রিয়মাণ।
কে জানতো দানবের কাছে বেশি প্রিয় রক্তের ঘ্রাণ!
কি সে করুণ ইতিহাস! ফ্যাল ফ্যাল চেয়ে দ্যাখে চোখ
ক্ষত শুকিয়ে যায় ভেতরে লেপ্টে থাকে দগদগে শোক।
ফুটফুটে সাদা ছোট্ট সে হাঁস। সাঁতার শেখায়নি তাকে কেউ। কি সুন্দর ভাবে হাত পা মেলে ভাসে দীঘির জলে কেউতো করে না বারণ! জলের ভূখণ্ডে তার অপার স্বাধীনতা। রাজকুমারের মত ঘোড়ায় চেপে একদিন যে স্বপ্ন, ঠাঁই করে নিয়েছিল বাঙালির বুকে। চোখ মেলে তাকালে প্রতিটি হৃদয়ে দেখবে রক্তক্ষরণ। বাংলার মানচিত্র জুড়ে আজ শোকের মচ্ছব।
উড়িয়ে বিভেদের ঝাণ্ডা নিজেকে ভাগ করি বারবার।
বলি আমিও মানুষ! কা’কে পূণ্য বলি? কা’কে বলি
পাপ! আমার ওতো গায়ে পায়ে লেগে আছে বিপথী স্বপ্নের ছাপ। যতই ঘনায়ে আসুক রাত্রি। অমানুষ, ঘৃণার চৌহদ্দি থেকে বেরুতে পারে না কোনদিন। সেই ভরসারে পুঁজি করে পথ চলে যাঁরা। তাঁরা আর সব মানুষ হতে আলাদা। আমাদের শোক মিছিলের নিয়মিত যাত্রী।
কেউই কি আমরা ক্ষমা করতে পেরেছি নিজেকে? কোথায় পাবে আর ঢেঁকিছাঁটা চালের স্বাদ? জীবন উপচে পড়ে থাকে ভুলের ভাগাড়। তুলকালাম কাণ্ড শেষে, যে টুকু অবশিষ্ট থাকে সে আমাদের পিছিয়ে থাকা হাজার বছর।
যদিওবা ভবঘুরে …
বাংলার আকাশে আজও নিঃসংকোচে শকুন ওড়ে
প্রশ্ন ছুঁড়েই উড়াল দিয়েছে নিত্যকর্মে
এক বালিহাঁস তার,
এদেশ কি কখনো কলঙ্কমুক্ত হবে আর?
থরে থরে বেদনা বুকে একটা বাংলাদেশ,
নিথর নির্জীব প্রাণ,
অতঃপর সিঁড়ি বেয়ে, বয়ে যায় রক্তগঙ্গা।