একবার অনেক দিন হয়ে গেল কোথাও যাওয়া হয় না। কি করি কোথায় যাই ভেবে ভেবে পাগল হচ্ছিলাম। বাসা থেকে বের হয়ে মনটা একটু রিফ্রেশ করা দরকার। হাতে টাকা থাকার সাথে গন্তব্যের দূরত্ব নির্ভর করে। হাতে যেহেতু টাকা কম তাই কাছে কোথাও যেতে হবে। অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক করলাম পাবনার পাগলা গারদে যাবো। কত বন্ধু বান্ধব, ছোট-বড় ভাই বোন, কত মানুষরে জীবনে বলেছি যে পাবনা থেকে আসছেন নাকি। অথবা বলেছি যে পাবনায় পাঠাতে হবে আপনাকে/ তোমাকে/ তোকে। অর্থাৎ পাবনার পাগলা গারদে, রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি দেখতে না। এটা বাড়ি থেকে বেশি দূরেও না। তাই টাকাও খরচ তুলনামূলক কম হবে ভেবে রওনা হয়ে গেলাম। সাথে ছিল এক ছোট ভাই। এইরকম অদ্ভুত স্থানে (হাসপাতালে) বেড়াতে যাওয়ার জন্যই হোক, আর কাকতালীয় ব্যাপারই হোক, বাসে উঠেই হকচকিয়ে গেলাম। কোথাও সিট ফাকা নেই দেখে মাঝামাঝি এক জায়গায় এসে দাঁড়ালাম। আমাকে দেখেই এক মাঝবয়েসী লোক লাফিয়ে উঠে দাড়ালো, ‘স্যার, বসেন!’ আমি থতমত খেয়ে গেলাম। আমার ছোট ভাই খুব ইমপ্রেসড হয়ে আমার দিকে তাকালো। আর আমি ওর দিকে তাকালাম সন্দেহের চোখে। হচ্ছে টা কি? বাসের বেশ কিছু যাত্রী হো হো করে হেসে উঠলো। বুঝলাম গণ্ডগোল আছে কোথাও। এক লোক বলে উঠলো, ‘আরে একি পাগলের স্যার, হাহাহা…!’ এক লোক মশকরা করে উঠলো, ‘পাগলের স্যার ছাড়া পেল কিভাবে?’ আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। ছোট ভাই এর শ্রদ্ধা কৌতুকে পরিণত হলো। দেখি মুখ লুকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। হতাশ হয়ে আমার মুখ দিয়েও এক শব্দ বের হলো, ‘ হে হে হে!’ অনেক কষ্ট করে কিছুক্ষণ থাকার পর পিছনের দিকে এক সিট জোগাড় হলো। ছোট ভাইকে বসালাম। একটু পরে আমি তার কয়েক সিট পরে ফাঁকা জায়গা পেয়ে বসলাম। ছোট ভাইয়ের পাশের সিটের লোক উঠে চলে গেল। পাশে এক সুন্দরী মেয়ে গিয়ে বসলো। আমার পাশে এক বয়স্ক চাচা এসে বসে পান চিবোতে লাগলো । আমি বাসের জানালা দিয়ে বাইরের সুন্দর দৃশ্য আর দেখতে পারলাম না। আমার চোখ সেই সামনে ছোট ভাইয়ের উপর পড়ে রইলো। পাশের চাচার সাথে গল্পে গল্পে জানতে পারলাম উনার একটি মেয়ে আর দুইটি ছেলে সন্তান আছে। মেয়ে ক্লাস টেনে পড়ে। ঐযে ঐ মেয়ে, আমার ছোট ভাইয়ের পাশে বসে যে হাসছে। আমি চাচাকে হঠাৎ বলে ফেললাম, চাচা আমার ছোট ভাইকে নিয়ে আমরা খুব বিপদে আছি। সে ইয়াবা আসক্ত। আপনার মেয়ের পাশের ছেলেটাই আমার ভাই, ঐ যে। চাচার মুখের হাসি কেমন মলিন হয়ে গেল। সে তার মেয়েকে জোরে ডাক দিল, ‘এদিকে এসে বস টুম্পা’। আমাকে বললো, ‘বাজান তুমি একটু কষ্ট কইর‌্যা তোমার ভাইয়ের কাছে গিয়্যা বসো।’ আমি খুশি মনে আমার ভাইয়ের কাছে গিয়ে বসলাম। আমার ভাইয়ের হাসি মুখ থেকে বিলিন হয়ে গেল। পাশে গিয়ে বসে ওর কাঁধে হাত রাখলাম। ছোট ভাই জানালা দিয়ে দূরে বিষন্ন চোখে কাকতাড়ুয়া দেখতে লাগলো। পাঁচ বছর আগে আমিও এমন এক কাকতাড়ুয়া দেখেছিলাম। বাস থামলো। চাচা আর তার মেয়ে নেমে গেল। একটু পরে আবার বাস থামলো। আমাদের গন্তব্য এসে গেছে। আমি, ছোট ভাই, এক পাগল যে আমাকে স্যার ডেকেছিল আর তাকে যে স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ে আসলো এই চারজন বাস থেকে নামলাম। তারপর অনেক ঘটনা ঘটলো।