রেজাউল করিম খান: ২০০৮ সালের ২৭ শে জুলাই ডা. মিজানুর রহমান টুটুকে হত্যা করা হয়। তিনি পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল, লাল পতাকা) সম্পাদক ছিলেন। নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে চরমপন্থীদের গোলাগুলির সময় টুটুল মারা যান বলে দাবি করে পুলিশ। অন্যদিকে তাকে আদৌ গ্রেপ্তার করা হয় নি বলে জানান জঅই-এর ঊর্ধতন কর্মকর্তা। রানীনগর থানার তৎকালীন ওসি তোফাজ্জেল হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রবিবার ভোরে উপজেলার কালিগ্রাম ঈদগাহ মাঠে চরমপন্থীদের বৈঠকের খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি বিশেষ দল এলাকায় পৌঁছলে চরমপন্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। তখন পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। দুই পক্ষের গোলাগুলিতে টুটুল গুলিবিদ্ধ হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় রাণীনগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান। ঘটনাস্থল থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৫ রাউন্ড গুলি ও কয়েকটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধারের দাবিও করেছে পুলিশ। ওসি আরও বলেছিলেন, ‘ডা. টুটুল পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল-লাল পতাকা) প্রধান নেতা। তার বিরুদ্ধে বৃহত্তর রাজশাহী ও পাবনাসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় হত্যাসহ দুই শতাধিক মামলা রয়েছে।’ ডা. টুটুলের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় তিনি ‘চরমপন্থী’ সংগঠনে জড়িয়ে পড়েন।
নীতি ও রণকৌশল নিয়ে ২০০০ সালে দলের সাধারণ সম্পাদক মোফাখখার চৌধুরীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে টুটুল আলাদা হয়ে যান। ২০০৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল) নতো মোফাখখার চৌধুরীকে। গ্রেপ্তারের পরদিনই তথাকথিত ‘ক্রসফায়ার’-এ মারা যান তিনি। সিলেটের মোফাখখার চৌধুরী ওরফে এমআই চৌধুরী ছিলেন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির তাত্ত্বিক নেতা। পৃথক হয়ে ডা. টুটু তাঁর দলের নাম দেন ‘পূবাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল, লাল পতাকা) আর দলের অন্য অংশটি পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল-জনযুদ্ধ) নামে সংগঠিত হয় তপন মালিথার মাধ্যমে।
আগের লেখায় বলেছি, ২৯শে জুলাই জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সম্পাদক ফয়জুল হাকিমের আমন্ত্রণে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘মায়ের আশংকা সত্য হয়েছে। রবিবার ভোরে আত্মগোপনকারী দল পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল-লাল পতাকা) শীর্ষ নেতা টুটুল ‘ক্রসফায়ারে’ মারা গেছেন। অন্যান্য ঘটনার মতোই বলা হয়েছে, পুলিশ সন্ত্রাসী দলকে ধরতে গেলে উভয় পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে টুটুলের মৃত্যু হয়েছে।
আমরা ডা.মিজানুর রহমান টুটুলকে গ্রেফতার করে আদালতে বিচারের সন্মুখীন না করে ‘ক্রসফায়ার’ ‘বন্দুকযুদ্ধ’ র গল্প সাজিয়ে রাষ্ট্রীয় হেফাজতে হত্যার প্রতিবাদ জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছি । আমরা পরিষ্কার ভাবে বলতে চাই, রাষ্ট্রীয় হেফাজতে ডা.টুটুলকে হত্যার দায়-দায়িত্ব সেনাসমর্তিত এই সরকারকেই নিতে হবে । এটা সুপরিকল্পিতভাবে সংঘটিত একটি রাজনৈতিক হত্যা। সন্ত্রাসী কাজের সাথে যুক্ত না হওয়া স্বত্তেও ডা. টুটুলকে সন্ত্রাস দমনের নামে হত্যার ঘটনা থেকে আমরা আশংকা করছি ক্ষমতাসীনদের সাথে ‘ভীন্নমত’ পোষণকারীরা এখন আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে । আপনারা জানেন ২০০৭ এর ১১জানুয়ারী হতে আজ পর্যন্ত জরুরী অবস্থায় রাষ্ট্রীয় হেফাজতে নিয়ে ১৯৭ জনকে ‘ক্রসফায়ার’ ‘বন্দুক যুদ্ধ,’সুট আউট’,’এনক্উন্টার’ এর নামে হত্যা করা হয়েছে। এই বিচার বহির্ভুত হত্যা হচ্ছে আইনকে খতম করার এক জঘণ্য রূপ।’