কি কি দেখার কথা ছিলো কি কি হবার কথা ছিলো অথচ হচ্ছে কি দেখছি কি? সেই ছোট বেলা বাংলাদেশ টেলিভিশন এ একটা নাটক দেখেছিলাম, সেই নাটকের একটা সংলাপ এখনো কানে বাজে। সংলাপটা ছিলো, দেড় মনের বস্তা চেয়ারম্যান এর নাস্তা। তখন টিভি বলতে সবেধন নীলমনি ঐ একটাই বিটিভি মানে বাংলাদেশ টেলিভিশন। এতো বছর পরেও সেই কথার মানে খুঁজে ফিরতে খুব যে কষ্ট হয় তা কিন্তু নয়। সেই বিটিভির আমলের চেয়ারম্যানের চরিত্র আর বর্তমানের স্যাটেলাইট এর যুগের চেয়ারম্যানের বেশিরভাগ চরিত্রগত দিক একই। ধরো মারো আর উদরপূর্তি করো। চাইলেই এই প্যাচের ভিতর থেকে আশাজাগানিয়া কিছু আশা করাই হয়তো বোকামি।
এবার একটু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এর দিকে নজর দেয়া যাক। সাধারণত ব্যবসায়ীদের একটা দেশের মজবুত পিলারের সাথেও তুলনা করা হয়। ব্যবসায়ীরা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কুচক্রের হাত থেকে তাদের বৃত্তের বাইরে কি আমরা আসতে পেরেছি? না না না পারিনি। এই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট যুগ যুগ ধরে তাদের কালোবাজারি, মজুদদারির ব্যবসা জিইয়ে রেখেছে। আর আমরা ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ পরে যাচ্ছি তাদের গ্যাড়াকলের ভিতর। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজার প্রায়শই উদ্ধমুখি। সাধারণ ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায় প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র। কখনো চাল, কখনো ডাল, কখনো তেল, কখনো আদা, রসুন, পিয়াজ, চিনি, ইত্যাদি ইত্যাদি। এই বাজার নিয়ন্ত্রণ এর দায়িত্বে কিন্তু থাকে সরকার সবসময়, কিন্তু কি এক জাদুকরী ভেলকি কাজ করে যে সরকার আর এর লাগাম ধরে রাখার ক্ষমতা রাখতে পারে না, বা রাখে না। অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থার এই নিয়ম-নীতি কিন্তু যুগ যুগান্তরের। কে দেখবে? কে নিয়ন্ত্রণ করবে? যেন কারও কোনো দায়বদ্ধতা নেই, যতো দোষ নন্দ ঘোষের মানে আম জনতার।
থাক এইসব একটু প্রসঙ্গ পাল্টাই, একটা সময় বলা হতো ৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে, খুবই সত্য কথা। গ্রামের মানুষ ফসল ফলাবে সেই ফসলে ক্ষুধা নিবারণ হবে সারা দেশের মানুষের। এখনো ফসল উঠছে কিন্তু কৃষক তার ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। ধান, পাট, সরিষা, গম, আবাদ করে কৃষকের যে খরচ হয়, তা বিক্রি করতে গেলে দেখা যায় খাজনার চাইতে বাজনা বেশি। যার ফলে কৃষক ফসল উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। আস্তে আস্তে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে, গ্রামের মানুষের সহজ সরল জীবন ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। ফসলি জমি যে হারে কমে যাচ্ছে তাতে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আমাদের খাদ্য আমদানির উপর নির্ভরতা বেড়ে যাবে।
আবার প্রসঙ্গ একটু পাল্টাই, একটু রাজনৈতিক বিষয়ে আসি। রাজনীতির সেকাল আর একালের ভিতর বিস্তর ফারাক। একটা সময় ছিলো যখন শিক্ষিত আর সম্মানী মানুষদের পদভারে মুখর থাকতো রাজনীতির মঞ্চ। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আলাদা সু নজরে দেখা হতো। কিছু নেয়ার চাইতে কিছু দেয়ার মনোভাবাপন্ন ব্যাক্তিরাই রাজনীতির মাঠ দাপিয়ে বেড়াতো দেশজুড়ে। অথচ বর্তমান রাজনীতির দিকে নজর দিলেই তফাৎটা বোঝা যায়, রাত আার দিন ভাই রাত আর দিন। তবে এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না যে সেকালেও কিছু অসৎ রাজনীতিবিদ ছিলো, একালেও কিছু সৎ রাজনীতিবিদ আছে।
১৯৭১ সাল থেকে ২০২১ সাল একটা বাংলাদেশের বয়স আর কতই বা, আবার খুব একটা কমও না।
অতোশতো আর বুঝতে চাচ্ছি না আর বুঝতে চাইও না বাপু, অন্তত চিচিং ফাঁকটা বন্ধ হোক। রন্ধ্রে রন্ধ্রে জমে থাকা অনিয়ম দুর্নীতির ফাঁক ফোঁকর গুলো ঢেকে যাক।
একটা সোনার বাংলাদেশ চাই ব্যাস, একটা সোনার বাংলাদেশ চাই। সেটা যদি চেরাগের দৈত্য এসে করে তাহলে তাই করুক।