ছোট্ট বন্ধুরা তোমরা কেমন আছো? আমি নাফি রহমতুল্যাহ। ১১বছর বয়সী পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র। আজ আমি তোমাদের রহস্যময় মহাবিশ্ব সম্পর্কে কিছু কথা বলবো। আশাকরি তোমরা রহস্যময় মহাবিশ্ব সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে পারবে।
রহস্যময় মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছে ২ হাজার কোটি বছর আগে। তখন থেকেই সময়ের শুরু। বিজ্ঞানীরা বলেছেন মহাবিশ্বের জন্মের সময় প্রচন্ড একটি বিস্ফোরণ ঘটে। যাকে বলা হয় বিগ ব্যাঙ বা মহাবিস্ফোরণ। বিজ্ঞানীরা বলেছেন মহাবিশ্ব আগে ছিল ডিমের মতো। যখন এই বিস্ফোরন ঘটে তখন ডিমটি ফেটে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। গ্যালক্সি, ছায়াপথ সবাই একে অপরের থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে। সেদিন থেকেই সকল জিনিসের সূচনা হলো। বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন মহাবিশ্ব সময়ের সাথে সাথে প্রসারিত হচ্ছে। প্রথমে সৌরপরিবার নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।
সৌরপরিবার- আমাদের এই সৌরজগৎ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অন্তর্ভূক্ত যার মধ্যে সূর্য নামক নক্ষত্র সহ নয়টি গ্রহ আছে। গ্রহের নিজস্ব উপগ্রহ আছে। সূর্যকে কেন্দ্র করে বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লটো নামক ৯টি গ্রহ ঘুরে বেড়ায়। চাঁদ পৃথিবীর একটা উপগ্রহ। তবে প্লটো গ্রহের নাকি আর দেখা মিলে না। তাই বর্তমানে গ্রহের সংখ্যা ৮টি। তবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা ১১টি।
সূর্য ঃ- সূর্য একটি নক্ষত্র যাকে কেন্দ্র করেই ৯টি গ্রহ ঘুরে বেড়ায়। সকল গ্রহকে মায়ের মতো আলো বাতাস দিয়ে লালন পালন করে। সূর্য অনেক গরম এবং অনেক বড় যেখানে ১০ লক্ষ পৃথিবীর জায়গা হয়ে যাবে। আমরা যদি সূর্যের কাছাকছি যেতে পারতাম তাহলে ১ কেটি ৫৪ লক্ষ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা অনুভব করতে পারতাম। বিজ্ঞানীরা বলেছেন সূর্যের বয়স ৫০০ কোটি বছর। যদি সে আরো ৫০০ কোটি বছর বাঁচে তাহলে সে তার অর্ধেক জীবন পার করে ফেলেছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন সূর্য নাকি ১০০০ কোটি বছরেরও বেশি সময় বাঁচতে পারে।
বুধঃ- বুধ হলো সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ। এই গ্রহটি সূর্যের কাছাকাছি থাকায় গ্রহটি অনেক গরম। এতে প্রায় ৪০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করে। এতে কোনো প্রাণীরই অস্তিত্ব নেই। তবে বিজ্ঞানীরা এই গ্রহে বরফ খুঁজে পেয়েছে। বুধের পরেই শুক্র গ্রহের স্থান। এই শুক্রগ্রহ বুধ গ্রহের চেয়েও গরম। কারণ এখানে ৪৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করে। আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে যে বুধ সুর্যের সবচেয়ে কাছে থাকে বলে এই গ্রহটি সবচেয়ে গরম থাকার কথা তাহলে শুক্র কেন? এর কারণ হলো বুধ গ্রহে কার্বনডাই অক্সাইড এর পরিমান কম। আর শুক্রে মারাত্মক পরিমানে কার্বনডাই অক্সাইড থাকে। যার কারণে শুক্র গরম বেশি এবং ৪৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করে। তাই বলা যায় এখানেও কোন প্রাণীরই অস্তিত্ব নেই।
পৃথিবীঃ শুক্রের পর পৃথিবীর স্থান। অর্থাৎ তৃতীয়তম গ্রহ। এখানে তাপমাত্রা ওতটা বিরাজ করে না। কারণ এখানে অনেক কম বা অল্প পরিমান কার্বনডাই অক্সাইড ও এক ধরনের চুম্বুকক্ষেত্র থাকে যার কারনে পৃথিবীতে তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে। প্রায় সর্বোচ্চ ৬৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মতো। তাই এখানে প্রাণীর অস্তিত্ব সম্ভব। এখানে প্রায় ৮০০ কোটি মানুষ বসবাস করে।
মঙ্গলঃ- পৃথিবীর পর মঙ্গলের স্থান। অর্থাৎ চতুর্থতম গ্রহ। তবে আশ্চর্যের কথা। আমাদের উল্লেখিত গ্রহগুলি কয়েকটি পাথরের জোড়ায় সৃষ্টি হলেও মঙ্গল কিন্তু তা নয়। তাই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে যে মঙ্গল গ্রহের সৃষ্টি হলো কিভাবে? আসলে সূর্যের চারপাশে আগে বিভিন্ন ধুলিকনা ও গ্যাস ঘুরে বেড়াত। এগুলো একসঙ্গে জোড়া লেগে একটি শক্ত আকার ধারণ করতে থাকে। তারপর বিভিন্ন জিনিসকে তার দিকে টানতে থাকে। এভাবে আস্তে আস্তে এটি গ্রহ হিসেবে পরিচিত লাভ করে। যার নাম মঙ্গল গ্রহ। বিজ্ঞানীরা বলেছেন মঙ্গল গ্রহ নিজের কক্ষপথ থেকে ছুটে চলে যেতে পারে। যখন এটি ছুটে যাবে তখন এটি অন্যগ্রহের সাথে ধাক্কা খেয়ে সেই গ্রহসহ নিজে ধ্বংস হবে, না হয় মহাকাশে হারিয়ে যাবে, না হয় অন্য কোন নক্ষত্রের গ্রহ হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে, অথবা নিজের কক্ষপথে আবার ফিরেও আসতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন মঙ্গল গ্রহ এক সময় তার কক্ষপথ থেকে ছুটে চলে গিয়েছিলো। তারপর কোন এক নিয়মে আবার নিজের কক্ষপথে ফিরে এসেছে। বিজ্ঞানীরা এই গ্রহে কিছু বরফ, পানি ও কিছু মরা গাছ পেয়েছেন। তাই তারা ধারনা করেন এখানে প্রাণীর অস্তিত্ব থাকতে পারে।
বৃহস্পতিঃ- মঙ্গলের পর বৃহস্পতির স্থান। অর্থাৎ এটি সূর্যের পঞ্চমতম গ্রহ। যাকে বলে দানব গ্রহ। এটি সবচেয়ে বড় গ্রহ। এর মাটি অত্যান্ত শক্ত। বৃহস্পতির যে উপগ্রহটি রয়েছে তা সৌরজগতের সবচেয়ে বৃহত্তম উপগ্রহ। এতে যে বৃত্তাকার দাগ দেখা যায় সেখানে প্রায় ১৩৭৩টি পৃথিবীর জায়গা হয়ে যাবে। আর যে সরলতম দাগ দেখা যায় তাতে প্রায় ৩টি পৃথিবীর জায়গা হয়ে যাবে।
শনি ঃ- বৃহস্পতির পর শনি গ্রহের অবস্থান। এটি সূর্যের ষষ্ঠতম গ্রহ। অনেকেই শনি গ্রহকে খুবই পছন্দ করেন। তবে শনি গ্রহের ইতিহাস এতটা ভালো নয়। এর পিছনে রয়েছে ভয়াবহ হত্যাকান্ড। আগে শনি গ্রহের অনেক উপগ্রহ ছিল যারা বর্তমানে আর নেই। বর্তমানে শনি গ্রহে অল্পসংখ্যক উপগ্রহ রয়েছে। টাইটান নামে একটি উপগ্রহ আছে যা সৌরজগৎ এর দ্বিতীয়তম বড় উপগ্রহ। তবে শনির কথা বললেই মনে পড়ে যায় এর বলয়ের সৌন্দর্যের কথা। তবে এই সৌন্দর্যের পিছনে রয়েছে ভয়াবহ হত্যাকান্ড। কারণ শনি গ্রহ তার নিজস্ব বলয় তৈরী করতে গিয়ে অনেক গ্রহ ও উপগ্রহ ধ্বংস করে ফেলেছে এবং তাদের শক্তি কেড়ে নিয়েছে। আগে টাইটানের চেয়েও বড় উপগ্রহ শনির চারপাশে ঘুরতো যা ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইউরেনাস ঃ- শনির পরেই ইউরেনাসের স্থান। সূর্যের সপ্তমতম গ্রহ যা অত্যান্ত শীতল গ্রহ। তবে একটি ঘটনা রয়েছে আমাদের সকল গ্রহ যেমন ঘুরে ঘুর্ণির মতো ইউরেনাস কিন্তু সম্পূর্ন উল্টো। এটি ঘোরে চাকার মতো। যার কারণে এখানে ২১ বছর দিন ও ২১ বছর রাত বিরাজ করে। এখানে প্রায় -৪৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করে।
নেপচুনঃ- ইউরেনাসের পর নেপচুনের স্থান। অর্থাৎ নেপচুন সূর্যের অষ্টমতম গ্রহ। এই গ্রহকে বাতাসের গ্রহ বলা হয়। আমাদের পৃথিবীতে টর্নেডোর মতো ঝড় যেমন ৩০০ কিমি পর্যন্ত বয়ে যায়। সেখানে নেপচুনে সাধারন ভাবেই সর্বনিম্ন ২০০০ কিমি পর্যন্ত বাতাস বয়ে যায়। নেপচুনে প্রায় ৪০ বছরে একটা ঋতু হয়।
প্লটোঃ- নেপচুনের পরে প্লটোর স্থান। অথ্যাৎ সূর্যের নবমতম গ্রহ প্লটো। এটি সবচেয়ে ছোট গ্রহ। আমাদের পৃথিবীতে আলো পৌছতে যেখানে সময় লাগে ৮মিনিট সেখানে প্লটোতে লাগে ৫ ঘন্টা। বিজ্ঞানীদের ধারনা প্লটো গ্রহ অনেক বছর আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। যার কারনে বর্তমানে সৌরজগতে ৮টি গ্রহ আছে। তা হলে বন্ধুরা এই গ্রহগুলো সম্পর্কে সবচেয়ে আকর্ষনীয় তথ্যগুলি হলো-
# বুধ ঃ সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ যা অত্যান্ত উত্তপ্ত।
# শুক্র ঃ কার্বনডাই অক্সাইডযুক্ত ও অত্যান্ত তাপের গ্রহ।
# পৃথিবী ঃ প্রাণীর অস্তিত্বের গ্রহ।
# মঙ্গল ঃ ধলিকণা ও গ্যাস জাতীয় পদার্থের গ্রহ।
# বৃহস্পতি ঃ দানব গ্রহ।
# শনি ঃ খুনি গ্রহ।
# ইউরেনাস ঃ অতি শীতল গ্রহ।
# নেপচুন ঃ অতিরিক্ত বায়ুর প্রবাহের গ্রহ।
# প্লটোঃ সবচেয়ে দূরের গ্রহ যা বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত।
তাহলে এসো বন্ধুরা আমরা উপগ্রহ সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেইঃ
উপগ্রহঃ নক্ষত্রকে ঘিরে যারা ঘুরে তারা গ্রহ এবং গ্রহকে ঘিরে যারা ঘুরে তারা উপগ্রহ। উপগ্রহের সাথে গ্রহের কিছু মিল আছে। তবে সব গ্রহেরই উপগ্রহ থাকবে এমন কোন কথা নেই। বুধ ও শুক্র গ্রহের কোন উপগ্রহ নেই। পৃথিবীর উপগ্রহের সংখ্যা ১, মঙ্গলের ২, বৃহস্পতির ১৬, শনির ২১, ইউরেনাসের ৫, নেপচুনের ২ ও প্লটোর ছিল ১টি উপগ্রহ। উপগ্রহ গ্রহের তুলনায় অনেক ছোট যাহা গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘুরে বেড়ায়। যেমনঃ চাঁদ পৃথিবীর তুলনায় ছোট এবং এর চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। পৃথিবীর অনেক কাছে থাকায় চাঁদকে সূর্যের মতো বড় দেখায়। কারণ পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ৩৮৪০০০ কিমি এবং সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব ১৫ কোটি কিমি। তবে আগে চাঁদ থেকে পৃথিবীর দূরত্ব ছিলো ১৪ হাজার মাইল যা বর্তমানে প্রায় ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। অর্থাৎ চাঁদ ক্রমশ পৃথিবী থেকে দূরে সবে যাচ্ছে। কোন অভিমানে পৃথিবী থেকে সরে যাচ্ছে চাঁদ মামা!
সৌরপরিবারের মতো মহাবিশ্বের আরও অনেক পরিবার আছে। আমরা মিল্কিওয়ে গ্যালক্সির সৌরজগৎ নামে একটি সৌরপরিবারে পৃথিবী নামক গ্রহে বাস করি। বিজ্ঞানীরা বলেছেন সৌর পরিবারের মতো আরো হাজারো পরিবার মহাবিশ্বে আছে। সেখানে প্রাণীর অস্তিত্ব থাকতে পারে। তারা সৌরপরিবারের মতো একটি পরিবারের সন্ধান পেয়েছেন। সেই পরিবারে একটি লালচে জিনিসকে ঘিরে প্রায় ৬টি গ্রহ ঘুরে বেড়ায়। যাদের নাম হলো গ্রিস ৫২৫-বি, গ্রিস ৫২৫-সি, গ্রিস ৫২৫-ডি, গ্রিস ৫২৫-ই, গ্রিস ৫২৫-এফ, গ্রিস ৫২৫-জি ইত্যাদি। বন্ধুরা আশাকরি এই লেখাটি থেকে তোমরা মহাবিশ্ব সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে পেরেছো। আমি মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরও কিছু লেখার চেষ্টা করবো। আজ এ পর্যন্ত।